লাতু ডেস্ক:: এবারের জাতীয় নির্বাচনে সিলেটের ৬ প্রার্থী নৌকার অপেক্ষায় রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে তারা রয়েছেন আলোচনায়। দুর্যোগ, দুর্দিনে থাকেন পাশে। দলের অসময়েও তারা এগিয়ে আসেন। সিলেটের এই নেতাদের অনেকেরই বয়স চলে যাচ্ছে। ফলে হা-হুতাশের মধ্যে এবার বাজি ধরেছেন তারা। তেমনি একজন সিলেট-২ আসনের শফিকুর রহমান চৌধুরী। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। যুক্তরাজ্য থেকে উড়ে এসে ২০০৮ সালে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এরপর সিলেটে এগিয়ে যান তিনি।
হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থেকে সভাপতি। বিগত দুই টার্ম তিনি শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছেন। সাইডলাইনে বসে নির্বাচনে খেলা দেখেছেন। বলা হয় তাকে চব্বিশ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ। এবারো তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন। তার আসন নিয়ে এবারো কঠিন সমীকরণ। তবে- স্থানীয়রা সজাগ। এবার নৌকার প্রার্থী চায় এ আসনের আওয়ামী লীগ। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারাও তার পক্ষে। শফিক চৌধুরী জানিয়েছেন- নেত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আমরা কোনো সিদ্ধান্তে নেই।
সিলেট-৩ আসনে ২০১৩ সাল থেকে মাঠে রয়েছেন বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। দুই বছর আগে উপনির্বাচনে নৌকার জন্য লড়াই করেন। এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চান তিনি। তার বড় ভাই এনাম আহমদ চৌধুরীও এক সময় এ আসনের এমপি ছিলেন। ফলে ভাইয়ের সূত্র ধরে তিনি এ আসনে নৌকার দাবিদার। এবার মাঠ পর্যায়ে চমক দিয়েছেন তিনি। প্রচারণায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সাড়া পেয়েছেন। তাকে ঘিরে তুমুল আলোচনা এ আসনে। তবে ডা. দুলালের আস্থা আছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। দল তাকে মনোনয়ন দিলে সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ আসনের বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবও খুব বেশি দিন হয় এমপি হননি। তিনি দুই বছর আগে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন স্বপ্ন দেখার পর তিনি এমপি হন।
সিলেট-৪ আসনে ২০০৮ সাল থেকেই মাঠে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা গোলাপ মিয়া। এ আসনে ৬ বারের এমপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি এককভাবে এই আসনে প্রভাব রাখছেন। ফলে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কেউ পারেননি। হাল ছাড়ছেন না গোলাপ মিয়া। বিগত করোনা ও বন্যার সময় তিনি মানুষের কাছাকাছি ছিলেন। তাকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের কাছে তার রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। মাঝখানে তিনি উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। গোলাপ জানিয়েছেন- এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি সম্মান জানিয়েই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। কারও একার কাছে বন্দি নয়। সুতরাং এবার দলীয় সভানেত্রীর কাছে আমরা আবদার জানিয়েছি। নেত্রী কাজ করতে বলেছেন; কাজ করছি। বাকি সিদ্ধান্ত নেত্রীই দেবেন। সিলেট-৫ আসনে এমপি হতে দীর্ঘদিন স্বপ্ন দেখছেন সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি ২০০১ সাল থেকেই মনোনয়ন চাচ্ছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্তির চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিলেন। শেষে মনোনয়ন দেয়া হয় হাফিজ আহমদ মজুমদারকে। এরপর দলের প্রয়োজনে জেলার রাজনীতি থেকে তাকে মহানগর সভাপতি করা হয়। সভানেত্রীর নির্দেশ মতো তিনি নগরে রাজনীতি করলেও নিজ উপজেলা সিলেট-৫ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতির ঘাটতি রাখেননি। এবার যেহেতু বর্তমান এমপি প্রার্থী হচ্ছেন না, মাসুক উদ্দিন আশাবাদী। তবে শরিক দল নিয়ে এখানে চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগ। এ আসনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. আহমদ আল কবিরও দীর্ঘদিন থেকে মনোনয়ন চাইছেন। দলের মনোনয়নের আশায় তিনি এলাকায় শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। দুর্দিনে মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছেন। কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে করোনা এবং বন্যায় নিজ উদ্যোগে মানুষের কাছে থেকে সাড়া ফেলেছেন তিনি।
সিলেট-৬ আসনে কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে। ২০০৮ সালে দলীয় সভানেত্রীকে নিয়ে বিদেশ থেকে ফিরেই মাঠে সক্রিয় হন। এরপর থেকে একদিনের জন্যও তিনি মাঠ ছাড়েননি। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ। নাহিদের কারণে সরওয়ারের অপেক্ষা বাড়ছে। তবে; এবার দলীয় ফোরামে জোরেশোরেই লবিং চালাচ্ছেন সরওয়ার। কারণ; আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। গত করোনা ও বন্যায় নিজ উদ্যোগে এলাকার মানুষের কাছাকাছি ছিলেন তিনি। এ কারণে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সরওয়ার হোসেন জানিয়েছেন; আমরা মাঠে কাজ করছি। দলীয় কর্মী ও মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছি। মানুষ ভালোবাসে। এটাই প্রাপ্তি। দলের শীর্ষ মহলের ওপর আস্থা আছে জানিয়ে সরওয়ার বলেন- দল মনোনয়ন দিলে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত আছি। গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের গ্রামে গ্রামে আমি গিয়েছি। জানি, মানুষ কী চায়।