লাতু ডেস্ক:: নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে গাইড বই (সহায়ক গ্রন্থ) বিক্রি করায় সিন্ডিকেটের চক্ষুশূল হয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার একাধিক পুস্তক ব্যবসায়ী। ওই চক্রের খপ্পরে পড়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পুস্তক ব্যবসায়ীরা। আর ন্যায্যমূল্যে সহায়ক বইসহ শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
ওই সিন্ডিকেটের এমন আচরণে এ জেলার একাধিক পুস্তক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সূত্র মতে, নির্ধারিত মূল্যের ছয়শ’ টাকার গাইড বই বিশ টাকা কমে বিক্রি করার অভিযোগ এনে কোনো প্রকার প্রমাণ বা শুনানি ছাড়াই বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নাম ব্যবহার করে স্থানীয় গুটি কয়েক ব্যক্তি মৌলভীবাজার শহরের সুনামধন্য পুস্তক বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া লাইব্রেরিসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করে। জরিমানার বিষয়টি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রচারিত হলে জেলা প্রশাসকের নামে জাল অভিযোগপত্র দিয়ে ৩০শে জানুয়ারি ব্ল্যাকমেইল করে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আবারো একই কায়দায় ফেব্রুয়ারি মাসেও আর দুই হাজার টাকা জরিমানা করে। অবৈধ পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার পরও পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি থেকে বই সরবরাহ পাচ্ছে না ওই প্রতিষ্ঠানসহ জেলা ও উপজেলার একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বরং তাদের প্রতিবন্ধকতায় বই সরবরাহ বন্ধ হওয়াতে ব্যবসা চালু রাখা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) কেন্দ্রীয় সভাপতির বরাবরে জালিয়াতি তদন্ত করার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি বরং ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মৌলভীবাজার শহরের ইসলামিয়া লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী যোবের আহমদ সালেহ। এ ছাড়াও জেলার ৩০-৩৫ জন পুস্তক ব্যবসায়ীকে একই কায়দায় ওই চক্রটি একাধিকবার ২-৩ হাজার টাকা তাদের মনগড়া জরিমানা করে। ব্যবসায়ীরা ওই চক্রটির নানা হয়রানিতে তাদের ব্যবসা চালু রাখা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিভাবক, বাপার মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক, রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী আ স ম ছালেহ সুহেল ও সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ মৌলভীবাজার এর সহ-সভাপতি সমাজকর্মী এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। কম দামে বিক্রি করাতে জরিমানা করে বই বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন এমন সিন্ডিকেট প্রথা। এ বিষয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমরা শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে আন্দোলনে নামবো।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান বলেন, এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। আমরা শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর আন্দোলন করছি। আর এখানে দাম কমানোতে সিন্ডিকেটরা ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে।
জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, শিক্ষাবান্ধব এ সরকার শিক্ষা উপকরণের দাম কমিয়ে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। আর অতি মুনাফালোভী একটি কুচক্রী মহল সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে তারা নিজেদের আখের গোছাতে তৎপর। ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. আবদাল হোসাইন বলেন, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কম দামে বিক্রি করায় জরিমানা করে এখন ওদের ব্যবসা বন্ধ করার পাঁয়তারা। গরিব শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করবে তা কি ওরা ভাবে না। দ্রুত সমাধান না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) সিলেট বিভাগের পরিচালক মো. খলিলুর রহমানের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বর্ণালী পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।