লাতু ডেস্ক:: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক গৃহকর্মীর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলসহ তার পরিবারের সাতজনকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এ মামলার শুনানি শেষে নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলসহ সাত আসামিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। বিষয়টি সোমবার বিকেলে নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ভূইগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলের বাড়ি থেকে একই এলাকার বাসিন্দা মৃত জামাল মিয়ার মেয়ে ও স্থানীয় কানিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা বেগম রায়না (১৫) নামের এক গৃহকর্মীর গলায় ফাঁস দেওয়া লাশ উদ্ধার করে কুলাউড়া থানার পুলিশ। গৃহকর্মী রায়না নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলের বাড়িতে কাজ করত। বাড়িতে কাজ করার সুবাদে নূর আহমদ চৌধুরীসহ তার পরিবারের সদস্যরা গৃহকর্মী তাসলিমার ওপর বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করতেন।
ঘটনার দিন দুপুরে নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলের বাড়ির সকল সদস্যদের অগোচরে একটি কক্ষের বাথরুমে ঢুকে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে তাসলিমা আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় গৃহকর্মীর ভাই সালমান মিয়া বাদী হয়ে প্রথমে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। পরে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলসহ তার পাঁচ ভাই ও ছেলেকে অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা (১২৫/২০২১) দায়ের করেন ভিকটিমের ভাই সালমান মিয়া। মামলার অন্য আসামিরা হলেন নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলের ছেলে ইফতেফার আহমদ চৌধুরী মাহি, ভাই ফয়ছল আহমদ চৌধুরী, কবির আহমদ চৌধুরী হারুন, শহিদ আহমদ চৌধুরী আতিক, তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, গুলজার আহমদ চৌধুরী। পরে মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মৌলভীবাজারের সিআইডির এসআই মো. শায়েক আহমেদ।
এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন নেন। কিন্তু জামিনের মেয়াদ ছিল ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ওই দিনই মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে আসামিরা হাজির হলে নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুলসহ সাত আসামিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।
আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গৃহকর্মী তাসলিমা বেগম রায়নার মৃত্যুর ঘটনায় প্রথমে কুলাউড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। সেটির প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। পরে ভিকটিমের ভাই আদালতে মামলা দায়ের করলে সেটি তদন্ত করে সিআইডি। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা হত্যার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। মামলার বাদীপক্ষ দরিদ্র পরিবারের লোক হওয়ায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বাদীপক্ষকে দিয়ে আসামিদের হয়রানি করার জন্য আদালতে মামলা করিয়েছেন। এখন আসামিদের জামিনের জন্য আমরা মূল আদালতে আবেদন করব।’