লাতু ডেস্ক:: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে নৌকা মার্কার জন্য লড়াই শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সিলেট ও লন্ডনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। সিলেটের রাজনীতিকরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ‘লন্ডনের প্রার্থীর’ কর্তৃত্ব মানতে চান না। এ কারণে একজোট হয়ে মাঠে নামেন সিলেটের নেতারাও। ইতিমধ্যে দলীয় ফোরামে সিলেট আওয়ামী লীগের ৮ প্রার্থী লড়াই জমিয়ে তুলেছেন।
তবে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণায় নামা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নাছোরবান্দা। গত ২২শে জানুয়ারি থেকে মাঠে সক্রিয় তিনি। এক দিনের জন্য ছাড়েননি মাঠ। এখন দলীয় ফোরামে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আগামী ২১শে জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক আগ থেকেই সক্রিয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে প্রার্থী হতে এবার কিছু নতুন মুখও এসেছে আলোচনায়। তবে এ পর্যন্ত লন্ডন ও সিলেটের ৮ প্রার্থীর নাম ভোটের মাঠ আলোচিত হচ্ছে।
এরমধ্যে রয়েছেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু, সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের নামও আছে তালিকায়। একেক করে তারা প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। গতকাল সম্ভাব্য প্রার্থীরা নগরের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। কেউ কেউ করেন গণসংযোগও।
সিলেট আওয়ামী লীগের মেয়র পদে এবারই নতুন মুখ আসছে। এর আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তার জীবদ্দশায় এই পদে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার কামরান নেই। কামরানের মৃত্যুর পর অনেক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। গত নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে নৌকার জন্য লড়াই করেছিলেন তারাও এবার আগে থেকেই মাঠে সরব।
এরমধ্যে রয়েছেন- মহানগরের বর্তমান সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। চূড়ান্ত লড়াইয়ে আসাদ শক্ত প্রতিপক্ষ হয়েছিলেন। কামরানের মৃত্যুর পর থেকে মাঠে সক্রিয় হন তার ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু। পরে একে একে মহানগর যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, আজাদুর রহমান আজাদ সহ অন্য প্রার্থীরা মাঠে নামেন। সর্বশেষ মাঠে নেমেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তিনি সিটি নির্বাচনে নেমেছেন বলে জানিয়েই মাঠে নামেন। এরপর থেকে আনোয়ারুজ্জামানই রয়েছেন প্রচারণায় এগিয়ে। তিনি প্রতিদিনই একাধিক সামাজিক অনুষ্ঠানে শরিক হওয়া ছাড়াও ভোটের মাঠ গোছাচ্ছেন। তবে জেলা ও মহানগর আনোয়ারুজ্জামানের এই মাঠে নামাকে ভালো চোখে নেয়নি। দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা না বলে মেয়র পদে নির্বাচনে নেমে যাওয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সিলেটের নেতারা। এ কারণে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগে নেতাদের মধ্যে যে কাউকেই তারা প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। সর্বশেষ দলীয় প্ল্যাটফরমে সভানেত্রীর কাছে তারা এ দাবিই জানাবেন বলে জানিয়েছেন নেতারা।
তারা জানিয়েছেন- সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান যোগ্য প্রার্থী হওয়ার পরও দুইবার পরাজিত হন। আর এই পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে দলীয় কোন্দল। দলের নেতাদের নিষ্ক্রিতা এবং দলাদলির কারণে পরপর বার দুইবার পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী। এবারো সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে সেই কোন্দল চাঙা দিয়ে উঠেছে। নেতারাও হয়ে পড়ছেন বিভক্ত।
এক্ষেত্রে একক প্রার্থী দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে তুলে আনা সিলেট আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ফলে ভোটের আগে দলীয় কোন্দলের মীমাংসা চান সিলেটের নেতারা। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের লন্ডন সফর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সিলেটে। লন্ডনে গিয়ে তিনি প্রবাসী নেতাদের কাছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সহযোগিতা চেয়েছেন।
সিটি নির্বাচনে আবেগের নাম হচ্ছে ডা. আরমান আহমদ শিপলু। সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বড় ছেলে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিপলু পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছে। পিতার সূত্রধরে ভোটে মাঠে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে শিপলু।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- ‘যে প্রার্থী দিয়ে জয় সম্ভব হবে আমরা সে ধরনের যোগ্য প্রার্থী চাই। যার সঙ্গে সিলেটের রাজনৈতিক পরম্পরা রয়েছে; সে ধরনের প্রার্থীও চাই।’
তিনি বলেন- ‘প্রার্থীরা দলীয় প্ল্যাটফরমে মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন। এরপর জমা দিবেন। মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করার আগে যদি আমাদের মতামত চাওয়া হয়, আমরা আমাদের মতামত দেবো। তবে দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এই সিদ্বান্ত মেনেই আমাদের মাঠে কাজ করতে হবে।’