লাতু ডেস্ক:: বৈষম্যপূর্ণ বিমান ভাড়া, টিকিট সংকট, যাত্রী দুর্ভোগ, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের একের পর এক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে নাখোশ স্থানীয় সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ অবস্থায় সিলেটের বিমানবন্দরটির সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা নিতে বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
জানা গেছে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় রুটের যাত্রীরাই তুলনামূলকভাবে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া সার্বিক যাত্রীসেবায়ও তলানিতে নেমেছে সিলেটের বিমানবন্দরটি। এর ফলে একদিকে মালামাল পরিবহন ও যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বিদেশিদের কাছে। বিশেষ করে সিলেট থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন বন্ধ করার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বেসরকারি এয়ালাইনগুলো। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনকে শুনতে হচ্ছে একের পর এক অভিযোগ। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি ছয়টি সুপারিশ করে বিমান প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দেন তিনি। বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বেবিচক চেয়ারম্যান এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ও সিইওকে এ চিঠি দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষে চিঠিতে সই করেন উপসচিব মো. আব্দুল আউয়াল। চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের পর তা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে গত ১ ডিসেম্বর থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের পরিবহন বন্ধ আছে। এ কারণে সিলেট থেকে ঢাকা রুটে টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে সিলেট থেকে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন বন্ধসহ বেশকিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন- বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসতে খরচ হয় আনুমানিক ৮০০ পাউন্ড, যেখানে লন্ডন থেকে সিলেট আসতে খরচ হয় ১০০০ পাউন্ড। অথচ ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব কম। এরপরও যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে লন্ডন থেকে সিলেট আসতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দূরত্ব বিবেচনায় ভাড়ার বৈষম্য দূর করতে পারলে যাত্রীরা সরাসরি সিলেট পর্যন্ত অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারবে এবং বিড়ম্বনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর বেশির ভাগ প্যাসেঞ্জার সিলেট নেমে গেলেও ওই ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন বিমান রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ যাত্রীরা টিকিট সংকটের কারণে চড়া মূল্যে বেসরকারি বিমানের টিকিট সংগ্রহ করছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন সিলেট বিভাগের চারটি জেলা হতে বিপুলসংখ্যক যাত্রী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে যাতায়াত করে থাকেন। এই যাত্রীদের আগমন এবং গমনের সময় তাদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকেন। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং আশপাশে অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষমাণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্নতমানের কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত অপেক্ষমাণ কক্ষ নেই। যার দরুন যাত্রীদের সঙ্গে আসা এসব দর্শনার্থীর ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অচিরেই এখানে উন্নতমানের আধুনিক সুবিধাসংবলিত অপেক্ষমাণ কক্ষ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠিতে বলেন, ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সিলেটে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে। ফলে সিলেট ও আশপাশের জেলা হতে বহির্বিশ্বে সবজি রপ্তানি করার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে পচনশীল পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে ঢাকার শ্যামপুরে যেমন পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউস রয়েছে, অনুরূপভাবে সিলেটেও পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউস নির্মাণ করা দরকার। তা হলে সিলেট ও আশপাশের জেলাগুলো হতে বহির্বিশ্বে এসব পণ্য রপ্তানির নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গোতে মালামাল রপ্তানি করা গেলেও মালামাল সরাসরি আমদানি করা যাচ্ছে না। আমদানীকৃত পণ্য ঢাকাতে এসে পরে সিলেটে যায়। সিলেটে কার্গো হ্যান্ডলিং আনুষঙ্গিক সুযোগসুবিধা বিদ্যমান থাকায় সরাসরি লন্ডন থেকে সিলেটে কার্গো ইমপোর্ট চালু করা প্রয়োজন। যদিও আগে এই সেবা চালু ছিল।
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেছেন, চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু রয়েছে। কিন্তু সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকা সত্ত্বেও লন্ডন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিলেটে আসে না। অতীতে ফ্লাইট দুবাই সরাসরি সিলেটে চলাচল করলেও বর্তমানে তা বন্ধ আছে। পুনরায় এ ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা হলে রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে এবং যাত্রীরাও বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
সার্বিক দিক বিবেচনায় বিমানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন পুনরায় চালু করা, লন্ডন-ঢাকা-সিলেট রুটে ভাড়ার বৈষম্য দূরীকরণ, অপেক্ষমাণ কক্ষ নির্মাণ, পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউস নির্মাণ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুনরায় চালুকরণসহ বর্ণিত বিষয়সমূহে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিমানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় চিঠিতে।