বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

অপসারিত হচ্ছেন জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান



বিজ্ঞাপন

রিপন দে :: ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেই চার্জশিট গ্রহণ করে মামলার পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ফৌজদারি মামলায় আদালতে চার্জশিট গ্রহণ হওয়ায় উপজেলা পরিষদ বিধিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদ থেকে এম এ মোঈদ ফারুকের অপসারণ হওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার বলে জানিয়েছেন আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুড়ীর দিনবন্ধু পোলট্রি ফার্মে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় উল্লিখিত অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে চেয়ারম্যান এম এ মোঈদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পিবিআই। গত ২৯ জুলাই চার্জশিট জমা দেওয়ার পর গতকাল বুধবার তা গ্রহণ করে মামলার পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তবে মামলাটির আসামি চেয়ারম্যান মোঈদ বর্তমানে এক মাসের জামিনে আছেন। মামলার বাদীর আইনজীবী গৌছ উদ্দিন নিক্সন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি তিনটি জাতীয় দৈনিকে জুড়ীর লাটিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন আলোচিত-সমালোচিত চেয়ারম্যান মোঈদ। তিনি সাংবাদিকদের উন্নয়নবিরোধী ও দেশদ্রোহী উল্লেখ করে তাদের বাড়িতে হামলার হুমকি দেন। মাতাল হয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর হামলার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের হল্যান্ড শাখার সভাপতি থাকাকালে সেখানে এক অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ডালিমের পক্ষে কথা বলেন চেয়ারম্যান মোঈদ। তিনি দাবি করেন, ডালিম কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন না।

আদালত চার্জশিট আমলে নেওয়ায় এবার তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ হারাচ্ছেন। কারণ উপজেলা পরিষদ বিধিমালায় বলা হয়েছে, উপযুক্ত আদালত কর্র্তৃক কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে সরকারের বিবেচনায় উক্ত চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা সদস্য বা অন্য কোনো সদস্য কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থী হইলে, সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা সদস্য বা অন্য কোনো সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে।

পিবিআইর মৌলভীবাজার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত বছরের ২ মে নিজের পোলট্রি ফার্মে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে জুড়ী থানায় মামলা করেন ফার্মটির মালিক দ্বীনবন্ধু সেন। এরপর জেলার পুলিশ সুপারের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২০ জুলাই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেয় পিবিআই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ এক বছর তদন্ত করে বাদীর অভিযোগের সত্যতা পাই। আমরা প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি, কিছু মালামালও উদ্ধার করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে আরও ১২ জনসহ সব আসামির বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারের বিজ্ঞ আদালতে গত ২৯ জুলাই চার্জশিট দাখিল করেছি।’

পিবিআইর মৌলভীবাজারের সুপার মো. আবু ইউসুফ বলেন, ‘আমরা আমাদের তদন্তে যা পেয়েছি তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি। এখন বিজ্ঞ আদালত বিচার করবেন।’

আদালত চার্জশিট গ্রহণের পর চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুকের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা জানতে চাইলে জুড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমাদের হাতে এখনো আসেনি।’

আর স্থানীয় সরকার বিভাগের মৌলভীবাজারের উপসচিব মল্লিকা দে বলেন, ‘এখনো কাগজপত্র আমার কাছে আসেনি। বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর উপজেলা পরিষদের আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আদালতে চার্জশিট গ্রহণের পর উপজেলা পরিষদ বিধিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদ থেকে এম এ মোঈদ ফারুককে অপসারণে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। চেয়ারম্যান মোঈদ ফারুক বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। রায় আমার বিপক্ষে না যাওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে (উপজেলা চেয়ারম্যানের) কোনো সমস্যা নাই।’

এম এ মোঈদ ফারুক গত বছরের ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কিত কাণ্ডে আলোচিত হন। জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগের দিন রাতে স্থানীয় শিশুপার্কে নির্মিত মঞ্চের পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত বিলবোর্ড ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালে সেখানে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘মেজর ডালিম তার পারিবারিক বন্ধু। ডালিম কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন না।’ অথচ ডালিম বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি।