জাহাঙ্গীর আলম :: ১৯৭৮ সালের ৪ মে পূর্ব লন্ডনে এক তরুণ বাংলাদেশী টেক্সটাইল শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছিল। এটি একটি জাতিগতভাবে অনুপ্রাণিত হত্যা ছিল- সেই সময়টি অনন্য নয়, তবে বাঙালি সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলে। আলতাব আলীর স্মরণে এখন স্থানীয়রা একটি দিন উৎস্বর্গ করেন।
১৯৬৯ সালে চাচার সাথে স্বপ্নের বিলেতে আলতাব আলীর আগমন ঘটে। তিনি ১৯৭৫ সালে পাঁচ মাসের জন্য বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে বিয়ে করেন। তারপর তিনি যখন ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন, তখন তাঁর স্ত্রীকে তাঁর পিতা-মাতার কাছে রেখে আসেন। পরিকল্পনা ছিল তাঁর স্ত্রী পরে তাঁর সাথে যোগ দেবেন। কিন্তু সেটি আর কখনও হয়ে ওঠেনি। তার আগেই বর্ণবাদের এক মর্মান্তিক আক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়।
১৯৭৮ সালের ৪ মে, আলী, ২৪ বছর বয়সী, অ্যাডলার স্ট্রিট, সেন্ট মেরি গার্ডেনের পাশাপাশি কাজ থেকে বাড়ি চলার সময়, রায় আর্নল্ড, কার্ল লুডলো এবং অজ্ঞাত অন্য এক ছেলেসহ মোট তিন কিশোর দ্বারা আক্রান্ত হন। আর্নল্ড এবং লুডলোর বয়স ছিল ১৭ আর নামহীন অন্য ছেলেটির বয়স মাত্র ১৬। হত্যাকাণ্ডটি জাতিগতভাবে অনুপ্রাণিত এবং এলোমেলো ছিল- তারা এমনকি আলতাব আলীকে চিনতেন না এবং তিনি কে ছিলেন সে দিকে খেয়াল রাখেনি। “কোনও কারণ নেই,” ১৬ বছর বয়সী ছেলে বলেছিল, যখন একজন পুলিশ অফিসার জানতে চায় আলীকে কেন আক্রমণ করা হয়। যারা তাকে আক্রমন করে এবং ছুরিকাঘাত করে, যাদের মন বর্ণবাদীদের দ্বারা বিষাক্ত হয়েছিল। পরে তাদের বিচারের সময় তারা বলতো যে তারা আলীকে আক্রমণ করেছিল কারণ সে একজন “পাকী”।
এর দশ দিন পরে, ৭,০০০ বাঙালি ডাউনিং স্ট্রিট এবং হাইড পার্কে যাত্রা করায় টাওয়ার হ্যামলেট জুড়ে স্থানীয় রেস্তোঁরাগুলো এবং কর্মশালা বন্ধ হয়ে যায়। তারা আলতাব আলীর কফিন বহনকারী একটি গাড়ির পিছনে বৃষ্টিতে নীরবে পদযাত্রা করেছিল।
তাদের প্ল্যাকার্ডগুলিতে লেখা ছিল, “আত্মরক্ষা কোনও অপরাধ নয়” এবং “এখানে থাকার জন্য, এখানে লড়াই করার জন্য”।বাঙালি যুব আন্দোলনের নেতৃত্বে আলতাব আলীর হত্যার জঙ্গি প্রতিক্রিয়া স্থানীয় বাঙালির এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। হাইড পার্কে সমাবেশ করার সময় তারা চেঁচিয়েছিল, “আলতাব আলী কে হত্যা করেছে?” সমস্বরে সবাই বলতো, “বর্ণবাদ, বর্ণবাদ!”
১৯৮৯ সালে হত্যার দৃশ্যে- সেন্ট মেরি পার্কে একটি নতুন প্রবেশদ্বার স্থাপন করা হয়েছিল, এটি আলতাব আলীর স্মৃতিসৌধ হিসাবে নকশাকৃত এবং বর্ণবাদী সহিংসতার শিকার সকলের জন্য নির্মিত হয়েছিল। তারপরে ১৯৯৮ সালে পার্কটির নামকরণ করা হয় আলতাব আলী পার্ক।
আলতাব আলীর প্রবাস জীবন এক দশকও পূর্ণ হয়নি কিন্তু তাঁর অম্লান মৃত্যুঞ্জয়ী আত্মত্যাগ বাংলাদেশী তথা অভিবাসীদের মনে বর্ণবাদী আন্দোলনের যে বীজ রোপণ করে তারই আলোকে আজ তারা মাথা উঁচু করে চলতে শিখেছে।
লেখক: লন্ডন প্রবাসী।