সামাজিক দূরত্বটুকুও মেনে চলছেন না অনেকেই। তবে পুলিশ কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখলেই সটকে পড়ছেন। প্রশাসন চলে গেলে আবার ফিরে আসছেন আড্ডায়। এ যেন চোর-পুলিশ খেলা চলছে।
আবার অনেকেই সড়ক ও মহাসড়ক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতও করছেন। মাছ বাজার, কাঁচাবাজারে ৩ ফুটের সামাজিক দূরত্ব কর্মসূচি না মেনে ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে। শায়েস্তাগঞ্জে মনিটরিং থাকা সত্ত্বেও উপজেলা সদরসহ গ্রাম-গঞ্জে, সাপ্তাহিক হাটসহ বাজারে অধিকাংশ মানুষ মানছেন না মরণঘাতী করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব কর্মসূচি।
আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনী সড়কে দিয়ে যাওয়ার পরপরই লোকজন ঘর থেকে দল বেধে সড়কে চলাচল করছে। আড্ডা দিচ্ছে চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে। আবার আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দেখলে আঁড়ালে একটু সরে যাচ্ছে। একইভাবে শহরে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসও চলছে অবাধে। এই অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েও বজায় রাখতে পারছেন না সামাজিক দূরত্ব।
জানা যায়, ২৬ মার্চ থেকে সামাজিত দূরত্বে থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের গণপরিবহন ও জনসমাগম। একইসঙ্গে প্রবেশ ও বাহিরের পথ আটকে দেয়া হয়েছে বেশকিছু স্থানে। কিন্তু এখনো লকডাউনের আওতামুক্ত রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা।
অবশ্য শায়েস্তাগঞ্জের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে চেক করা হলেও থামছে না ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মানুষের ঢল। প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহীনির চোখে ধুলো দিয়ে প্রবেশ করছে এসব মানুষ। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায় জনমনে।
এদিকে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুপুর ২টার পর ফার্মেসি ব্যতীত সকল দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তা কার্যকর হলেও পাড়া-মহল্লায় কিছু কিছু দোকান খোলা রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের উপস্থিতি টের ফেলে দোকানের সাটার নামিয়ে রাখেন বিক্রেতারা। কৌশলে চলে কেনাবেচা। এছাড়া নদীর পাড়ে, বড় বড় ব্রিজের আশপাশে চলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। সরকারি অফিস বন্ধ থাকায় তার আশপাশেও অপ্রয়োজনে সমাগম করছে তরুণ ও যুবকরা।
সরেজমিনে বেশ ক’টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দেয় তখন মুহূর্তেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা চলে গেলে অনেকেই অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি করেন। বিশেষ করে হাটবাজারগুলোতে গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছে নানা বয়সের মানুষ। সামাজিক দূরত্বটুকুও মানছেন না অনেকেই।
অপরদিকে কিছু কিছু গ্রামে স্বেচ্ছায় লকডাউনের নামে রাস্তায় বাঁশ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওইসব গ্রামে ঢুকে দেখা যায়, প্রতিটি চায়ের দোকানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডাবাজি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি জানান, রাস্তায় বাঁশ ফেলে স্বেচ্ছায় লকডাউন করা হয়েছে। বগিরাগত লোক প্রবেশসহ যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করলেও চায়ের দোকানে নিজেদের আড্ডা কমেনি। পুলিশ যেন লকডাউন দেখে গ্রামের ভেতরে ঢুকতে না পারে এজন্য লুকোচুরি করা হচ্ছে প্রসাশেনের সঙ্গে। আর পুলিশ না আসাতে নিশ্চিন্তে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে ব্যবসা করতে পারছেন এবং যুবক বৃদ্ধসহ সকলে একসঙ্গে আড্ডা দিতে পারে এজন্যই স্বেচ্ছায় লকডাউন দেয়া হয়েছে।
সচেতন মহল মনে করেন, করোনা মোকাবেলায় সকলকে সচেতন হতে হবে। অপ্রয়োজনে আড্ডাবাজি বন্ধ করার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। তা না হলে সবার জন্য বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, বাজারে নিয়মিত টহল দেয়া হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা মতে করোনা প্রতিরোধে এখনও জনগণকে ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। জনসাধারণকে বাইরে অহেতুক ঘোরাফেরা বা আড্ডা না দিয়ে থাকার জন্য বলা হচ্ছে। সচেতনাতা বৃদ্ধির জন্য পুলিশ বিভিন্নভাবে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। এরপরও কিছু লোক অযথা ঘর থেকে বের হচ্ছে। আড্ডা দিচ্ছে। পুলিশ ওই স্থানে গেলেই সবাই পালায়।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমী আক্তার এ বিষয়ে বলেন, মানুষদের ঘরে রাখতে অভিযান অব্যাহত আছে। অযথা ঘরের বাইরে পাওয়া গেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।