পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘ওয়ালটন কারখানা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। ওয়ালটন মানসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করছে। ওয়ালটনের মতো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, পরিবেশ সুরক্ষার সব নীতি মেনেই ওয়ালটন পণ্য উৎপাদন করছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করছে ওয়ালটন; বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারের তরফ থেকে তাদেরকে সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে রেফ্রিজারেটর ও কম্প্রেসর উৎপাদন কারখানা পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সুলতানা আফরোজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রফিক আহমেদ, পরিচালক মো. জিয়াউল হক, বিএসটিআইর মহাপরিচালক মুয়াজ্জেম হোসাইন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ওয়েন থি গোক ভ্যান, অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ খুরশিদ আলম প্রমুখ।
এর আগে অতিথিরা কারখানায় পৌঁছালে তাদেরকে স্বাগত জানান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম। প্রথমে তারা ওয়ালটনের সুসজ্জিত ডিসপ্লে সেন্টার পরিদর্শন করেন। এরপর ফ্রিজ, মেটাল কাস্টিং, কম্প্রেসর, তরল বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট (ইটিপি) ইত্যাদি ঘুরে দেখেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, হুমায়ুন কবীর, উদয় হাকিম, আলমগীর আলম সরকার, ইউসুফ আলী, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহজাদা সেলিম, শরীফ হারুনুর রশীদ, অপারেটিভ ডিরেক্টর তৌফিক-উল-কাদের, অ্যাডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর সোহেল রানা, মিডিয়া উপদেষ্টা এনায়েত ফেরদৌস, সিনিয়র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মোহসিন আলী মোল্লা প্রমুখ।
পরিবেশ বন, ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসিন চৌধুরী বলেন, মন্ট্রিল প্রোটোকলের আওতায় ফ্রিজ উৎপাদনে ওজোন স্তরের জন্য ক্ষতিকারক গ্যাসের ব্যবহার রোধে বাংলাদেশ সরকার, ইউএনডিপির সহায়তায় ওয়ালটনের মাধ্যমে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্বে এটি এ ধরনের প্রথম এবং সফল প্রকল্প।
এর আগে সকালে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের সম্মেলন কক্ষে ওই প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ উৎপাদনের ওপর একটি টেকনিক্যাল কর্মশালা হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), ওয়ালটনসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে জানানো হয়, ফ্রিজ ও কম্প্রেসরে ক্ষতিকারক এইচএফসি গ্যাস ফেজ আউটের লক্ষ্যে বিশ্বের প্রথম ‘এইচএফসি ফেজ আউট প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে ওয়ালটন। যাতে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ বন, ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ইউএনডিপি। এক বছর মেয়াদী ওই প্রকল্পের আওতায় ওয়ালটন কারখানা এবং সার্ভিস সেন্টারে ফ্রিজ এবং কম্প্রেসর থেকে পুরোপুরি এইচএফসি ফেজ আউট করে গ্রিন হাইড্রোকার্বন টেকনোলজির ব্যবহার নিয়ে কাজ চলছে। উক্ত প্রকল্পে এইচএফসি-১৩৪এ রেফ্রিজারেন্টের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব এইচসি-৬০০এ (আইসোবিউটেন) রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে বার্ষিক প্রায় ২৩০ মেট্রিক টন এইচএফসি গ্যাসের নিঃসরণ রোধ হবে। যা ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণের সমান। এর মধ্য দিয়ে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে ওয়ালটন তথা বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের ক্ষেত্রে এ প্রকল্প বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল হিসেবে গণ্য হবে।