বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

সাংবাদিক রিপনের উপর সাইবার ট্রাইব্যুনালের করা মামলা খারিজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি রিপন দে’র বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

জাগো নিউজে প্রকাশিত ‘পত্রিকার হকার থেকে কোটিপতি, বানালেন রাজকীয় বাড়ি’ শিরোনামে সংবাদের জেরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানার মাসুদ আহম্মেদ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আ স শামস জগলুল হোসেন পিটিশন মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামীম আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত রোববার (১৬ জুন) সাতজনের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার মাসুদ আহম্মেদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪, ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় একটি মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।


মামলার অপর আসামিরা হলেন- জাগো নিউজের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, দৈনিক সময়ের আলোর মফস্বল সম্পাদক, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হৃদয় দেবনাথ, সিলেট টুডেটুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক আব্দু্ল আলিম শাহ ও শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি হৃদয় দাস শুভ।

গত ১০ জুন জাগো নিউজে ‘পত্রিকার হকার থেকে কোটিপতি, বানালেন রাজকীয় বাড়ি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি রিপন দে বলেন , মামলা খারিজের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, আমি সব সময় সত্যের সঙ্গে এবং সত্য সংবাদ প্রকাশ করি।

সে সংবাদে উল্লেখ করা হয় , “দৈনিক মজুরিতে কাজ করা একজন অস্থায়ী শ্রমিক মাসুদ মিয়া ওরফে মাসুক। হঠাৎ বনে গেলেন কোটিপতি। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের শ্যামলী আবাসিক এলাকায় মাসুকের রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাজকীয় তিনতলা বাড়ি, বাড়ির ছাদে রয়েছে মিনি পার্ক।

জানা যায়, মাসুদ মিয়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন শ্রীমঙ্গল মেঘনা তেলের ডিপোতে ১৫ বছর ধরে কর্মরত। অফিসের ফাইল এগিয়ে দেয়া এবং অফিস স্টাফদের চা তৈরি করে দেয়াই তার মূল কাজ। স্থানীয় এক ঠিকাদারের মাধ্যমে অস্থায়ী শ্রমিক অর্থাৎ দৈনিক মজুরিভিত্তিতে মেঘনা ডিপোতে কাজে নিয়োগ পান তিনি।

মেঘনা তেলের ডিপোতে কাজের সুযোগে তেল-মবিলের ওজনে নয়-ছয় করে অল্প সময়ে জিরো থেকে কয়েক কোটির টাকার মালিক বনে যান মাসুদ মিয়া। সেই সঙ্গে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।


এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও মাসুদ মিয়ার আর্থিক অবস্থা ছিল করুণ। সংসার চালাতে বাইসাইকেলে বিক্রি করতেন খবরের কাগজ। তার স্ত্রী কাজ করতো মানুষের বাসা-বাড়িতে। প্রতিবেশী অনেকের বাড়িতে ধোয়ামোছার কাজ করতেন নব্য এই কোটিপতির স্ত্রী।

প্রতিবেশীরা জানান, শ্রীমঙ্গল মেঘনা তেলের ডিপোতে ঠিকাদারের মাধ্যমে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে যোগ দিয়েই কপাল খুলে যায় মাসুদের। বাড়ি-গাড়ি ছাড়াও তার নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। মেঘনা তেলের ডিপোতে কাজে যোগ দিয়েই ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পেয়ে যান মাসুদ। মেঘনা তেলের ডিপো কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে তেল-মবিলের ওজনদার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তেলের মাপে নয়-ছয়ে দক্ষতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষ তাকে দিয়ে ওজনের কাজ করান। ওপর মহলে হাত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও চাকরি হারাননি।

মাসুদ মিয়া ওরফে মাসুক, মেঘনা তেলের ডিপোতে দিনমজুর হিসেবে ২০০২ সালে কাজ শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর দৈনিক মজুরি হিসেবে ৪০ টাকা পেতেন তিনি। তবে বর্তমানে পাচ্ছেন দৈনিক ৭০০ টাকা।

কিন্তু বর্তমান বেতন অনুসারে ১৫ বছরের চাকরি জীবনে মাসুদের আয় হয় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। দৈনন্দিন খরচ বাদ দিলে সঞ্চয় তেমন থাকার কথা নয়। এরপরও বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মালিক মাসুদ। ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এই শ্রমিকের আয়ের সঙ্গে অর্জিত সম্পদের আকাশ-পাতাল ফারাক। তেল-মবিল ও অকটেনের ওজনে নয়-ছয় করে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়ায় শ্রীমঙ্গল শহরে মাসুদ এখন তুমুল আলোচিত ব্যক্তি। শহরের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে সবার ওপর তার নাম। বর্তমান পরিচিতির আড়ালে হারিয়ে গেছে তার অস্থায়ী শ্রমিকের পরিচয়।


তেলের ডিপোতে কর্মচারীর কাজ করে কীভাবে মাসুদ হঠাৎ কোটিপতি বনে গেলেন জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল মেঘনা তেলের ডিপোর ডিএস (ডিপো সুপার) সাঈদ হোসেন বলেন, মাসুদের এই অঢেল সম্পদের রহস্য আমার জানা নেই। তেলের ডিপোতে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে শ্রমিকের কাজ করেন মাসুদ। শুনেছি শহরে বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন তিনি।

তবে মাসুদের আসল পরিচয় অনেকেই জানেন না। অনেকেই জানেন তিনি মেঘনা ডিপোর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি অবশ্য নিজের প্রকৃত পদবি বলতে এখন লজ্জাবোধ করেন।
হঠাৎ কীভাবে কোটিপতি হলেন জানতে চাইলে মাসুদ মিয়া ওরফে মাসুক বলেন, শ্রীমঙ্গল মেঘনা তেলের ডিপোতে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে ১৫ বছর ধরে কর্মরত আছি। কোনোরকমে চলি ভাই। সবই তো বোঝেন। ব্যাংকে আমার অনেক ঋণ রয়েছে।

শ্রীমঙ্গল মেঘনা তেলের ডিপোতে চাকরি করে কীভাবে বাড়ি-গাড়ি বানালেন জানতে চাইলে চুপ হয়ে যান মাসুদ। অনেকটা বিব্রত অবস্থায় বলেন, ওসব বাদ দেন তো ভাই। আমার পদবি অস্থায়ী শ্রমিক অর্থাৎ রোজকামলা। কামলা দিয়েই এসব করেছি।’