রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

বাহুবলে রুমানা আক্তার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন: ৫০০ টাকার বিনিময়ে ধর্ষকের হাতে প্রেমিকাকে তুলে দেয় জুবায়ের
নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক



বিজ্ঞাপন

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আলোচিত রুমানা আক্তার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে রুমানার প্রেমিক জুবায়ের আহমদ। মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে প্রেমিকা রুমানাকে বন্ধুদের হাতে তুলে দেয় জুবায়ের। পরে বন্ধুদের নিয়ে প্রেমিকাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান মাহমুদ প্রধানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় জুবায়ের আহমদ। আদালতে পুরো ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় রুমানার প্রেমিক জুবায়ের।

শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী।

ঘটনার মূলহোতা জোবায়েরের জবানবন্দির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালে বাহুবল উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা রুমানা আক্তারের (২২) বিয়ে হয় বানিয়াচংয়ে। বিয়ের পরপরই বাবার বাড়ি চলে আসেন রুমানা। এরই মধ্যে রুমানার স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন।

বাবার বাড়ি আসার পর একই গ্রামের জুবায়ের আহমদের (২৪) সঙ্গে রুমানার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় তিন মাস তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলে। এরই মধ্যে প্রেমিকাকে নিয়ে কু-চিন্তা মাথায় আসে জুবায়েরের। সেই সঙ্গে প্রেমিকাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে বন্ধুদের যুক্ত করে জুবায়ের। শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের নিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বন্ধু সাইফুর রহমানকে জুবায়ের জানায় আজ রাতে তোদের জন্য এক সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে আসব আনন্দ-ফুর্তির জন্য। এ জন্য তোদের প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে দিতে হবে। ৫০০ টাকা করে দিলে প্রেমিকাকে তোদের হাতে তুলে দেব। কথা অনুযায়ী তার বন্ধু সাইফুর রহমান, মামুনুর রশিদ, আবু সাইদ ও ইলিয়াস মিয়া ৫০০ টাকা করে দেয়। টাকা নেয়ার পর সবাইকে রাত সাড়ে ১০টায় গ্রামের ঈদগাহের কাছে থাকতে বলে জুবায়ের।

এদিকে, প্রেমিকা রুমানাকে রাতে দেখা করতে বলা হয়। জুবায়ের প্রেমিকাকে বলে আমি তোমার বাড়ির পাশে এসে শিস দিলে বেরিয়ে আসবে। কথা অনুযায়ী জুবায়ের রাত ১১টার দিকে রুমানাদের বাড়ির পাশে গিয়ে শিস দেয়। শিস পেয়ে রুমানা বেরিয়ে এলে তাকে নিয়ে ঈদগাহের কাছে আসে জুবায়ের। সেখানে অন্যদের দেখতে পেয়ে চোখ কপালে ওঠে রুমানার। তখন রুমানা বাড়ি চলে যেতে চাইলে তাকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়।

ঘটনার পর রুমানা প্রেমিক জুবায়েরকে বলে তুমি আমার সঙ্গে বেইমানি করেছ। আমি বিষয়টি সাবইকে জানিয়ে দেব। তাৎক্ষণিকভাবে রুমানাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সঙ্গে সঙ্গে রুমানার গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে ঈদগাহের পাশের ধানের জমিতে রুমানার মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায় তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, ঘটনার পরদিন রুমানার মা বানেছা বেগম বাদী হয়ে বাহুবল থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। প্রথমে বাহুবল থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করে। প্রায় চার মাস তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

অবশেষে একই বছরের ৫ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় এসআই মোহাম্মদ মাইনুল ইসলামকে। প্রথমে সন্দেহভাজন হিসেবে চলতি বছরের ৬ মার্চ সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে বন্ধু মামুনুর রশিদ, আবু সাঈদ ও জুবায়েরকে গ্রেফতার করা হয়। তারা প্রত্যেকে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে রুমানাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। সবশেষ রুমানর প্রেমিক জুবায়ের শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। তবে আরেক ধর্ষক ইলিয়াছ পলাতক থাকায় তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী।