জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৩দিন। শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ভোটারদের ভোট ভাগিয়ে নিতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। শেষ সময়ের প্রচারণায়ও অভিমান করে এখনও নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত ১৮জন নেতা। মনোনয়ন না পেয়ে তারা অভিমানে নির্বাচনী মাঠ থেকে অনেক দূরে সরে আছেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা চেষ্টা করেও তাদের মান ভাঙাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন ১৩ জন নেতা। তাদের মধ্যে নৌকার টিকিট পান বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ার সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এতে অভিমান করে সিলেট-৬ আসনের মাঠে নেই কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ এফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু, বিয়ানীবাজার উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম পল্লব, লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফসার খান সাদেক, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা চৌধুরী সালেহ আহমদ, নিউ জার্সি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিক উদ্দিন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শামসুল ইসলাম বাচ্চু, গোলাপগঞ্জ উপজেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক হেলাল আহমদ চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসাইন। প্রচার শুরুর পর থেকে তাদের একদিনের জন্যও এলাকায় দেখা যায়নি।
তবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শামসুল ইসলাম বাচ্চু ও নিউ জার্সি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিক উদ্দিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সমর্থন করেন। এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বরের পর থেকে কয়েকটি এলাকায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ডেইজী সারওয়ারকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পক্ষে প্রচারণা করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন জানান, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় সময় দিচ্ছি। এ জন্য সিলেট-৬ আসনে প্রচারণায় সময় দেওয়া যাচ্ছেনা। আমি নেতাকর্মীরা এ আসনে নৌকার পক্ষে কাজ করছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ জানান, জনবিচ্ছিন্ন কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সিলেট-৬ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মূলত পরিচিতি লাভের জন্য। তারা মাঠে না নামলেও নৌকার বিজয় কেউ আটকানো সম্ভব নয়।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, জেলা কমিটির সদস্য ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাওলানা রশীদ আহমদ, জাসাসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা হেলাল খান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক। প্রথম পর্যায়ে বিএনপি শরীকদলের দুজনসহ মোট ৪ জনকে মনোনয়ন দেয়। পরে বিএনপি নেতা ফয়সল চৌধুরীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয় দলটি।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম জানান, আমি জেলার বিভিন্ন আসনে বিএনপি প্রার্থীদের সময় দিচ্ছি। এ আসনের বিএনপির প্রার্থী ফয়সল চৌধুরীর কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও আমি উপস্থিত ছিলাম।
মানোন্নয়ন বঞ্চিত এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটের দায়িত্বশীল হিসেবে আমাকে অন্য আসনগুলোতে সময় দিতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সব নেতারা আমার পাশে আছেন। এ আসনে প্রশাসন আমাদের নেতাকর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করে হয়রানি করছে। এসব কারণে অনেক নেতাকর্মী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তবে তারা কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফয়সল চৌধুরী বলেন, বিএনপি বিজয় সুনিশ্চিত জেনে জন বিচ্ছিন্ন জনপ্রতি প্রশাসনকে দিয়ে এ হয়রানি চালাচ্ছেন।
এ আসনে বড় দুই দলের প্রার্থী ছাড়াও চরমোনাই মনোনিত প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকে আজমল হোসেন, মটরগাড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া মিলু প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এছাড়াও বিকল্পধারার প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী মহাজোটের প্রার্থী নাহিদকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাড়িয়েছেন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৫ জন।