ভোটারদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও মৌলভীবাজার-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। রোববার গণমাধ্যমেও তার এই খোলা চিঠির কপি পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তার এই চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোলা চিঠিটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পূর্বক আমার প্রাণপ্রিয় কুলাউড়াবাসী, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের প্রতি নিবেদন করছি, কুলাউড়ার গত সাত দশকের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের ইতিহাস। ধনী, দরিদ্র, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সামাজিকতা ও ভ্রাতৃত্বের ইতিহাস, যা আমরা সকলেরই পরম গৌরবের তীর্থক্ষেত্র, যা কুলাউড়ার সুনাম ও ঐতিহ্য। দলমত নির্বিশেষ সম্প্রীতিময় ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়া আমাদের জন্য মহান সম্মানজনক।’
’কিন্তু আজ কেন এ কুলাউড়ার জনগণকে বিভক্ত করা হচ্ছে? আমাদের পাস্পরিক সম্মানকে ভূলুন্ঠিত করা হচ্ছে? আমাদের তরুণ সমাজকে হিংসা, বিদ্বেষ ও পারস্পরিক ঘৃণার অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? বরাবরই যে কোনও নির্বাচনের সময় কুলাউড়ার মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন, যাকে খুশি তাকে ভোট প্রদান করেছেন, নির্বাচনী আনন্দ আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গেও বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির মাধ্যমে উপভোগ করেছি। এতে সকলেই সম্মানিত হয়েছি, যা ছিল এই কুলাউড়ার অহংকার, আমাদের পূর্বপুরুষগণের শিক্ষা। তবে আজ কে বা কাদের ইন্ধনে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের শিক্ষাকে পদদলিত করছি।’
’আজ নির্বাচনী আনন্দযজ্ঞের সময়ে ঐক্যফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আমার নেতাকর্মীদের বিনা কারণে ও কৃত্রিম অজুহাতে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ক্ষমতার বদৌলতে তাদের নামে মিথ্যা মামলা, হুলিয়া জারি করা হচ্ছে। তারা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছে না। তাদের পরিবার-পরিজন উৎকণ্ঠায়। আজ তাদের মায়ের চোখের অশ্র আর বোনের কান্নায় কুলাউড়ার আকাশ-বাতাস ভারী হচ্ছে। সমাজ হচ্ছে কলুষিত? কেন বিনাঅপরাধে কারান্তরীণ সন্তানের জন্য একেকজন পিতার করুণ আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে? কেন স্বামীর জন্য প্রিয়তমা স্ত্রীর কান্না আর সন্তানদের আহাজারিতে কুলাউড়ার ঘরে ঘরে উৎকণ্ঠা ও বিষাদের করুণ সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে? এত আমাদের পূর্বপুরুষের মানবিক মূল্যবোধের কুলাউড়া নয়! এভাবে কি কোনও সম্প্রীতির সমাজ কল্পনা করা যায়? এভাবে কি সামাজিক মূল্যবোধের সহাবস্থান সম্ভব? যা অতীব দুঃখজনক। আমি মিথ্যা মামলা ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার প্রতিটি নেতাকর্মী এবং তাদের বেদনাকাতর ও উৎকণ্ঠিত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
‘রাজনীতি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের সমাজে একই পরিবারের সন্তান নানা দলের রাজনীতি করেন। সুতরাং আমরা নানা দল ও আদর্শে বিভক্ত থাকলেও আমাদের মধ্যে আত্মীয়তা, রক্ত ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি পরিবারে আঘাত লাগলে অন্য পরিবারে কান্নার রোল উঠে। তাই আমি সর্বদা সম্প্রীতিময় ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়ায় বিশ্বাসী। আমি যখন এমপি ছিলাম একটি মুহূর্তের জন্য ঘুণাক্ষরেও আমি প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের দমনের চিন্তা করি নাই। আমি দেখেছি কুলাউড়ার মানমর্যাদা।’
আমি দেখেছি কুলাউড়াবাসীর ঐক্য ও গৌরব। ছলে-বলে-কৌশলে প্রতিপক্ষ দমনের কৌশল কখনও রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে না। তা মানুষের মাঝে ঘৃণা ও হিংসার বিষবাষ্প ছড়ায়, যা একটি সমাজের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেয়। আজ কুলাউড়ার নির্বাচনী মাঠে প্রতিটি দলের প্রার্থী, নেতাকর্মী, সংগঠক, সমর্থক, ভোটার, কুলাউড়ার সাধারণ জনগণ ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আমার আকুল আবেদন, আসুন আমরা স্বাধীনভাবে প্রত্যেকের নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাই এবং কুলাউড়ার আবহমান কালের চিরায়ত সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষা করি। এরই সঙ্গে যারা বিনা অপরাধে ছলে-বলে-কৌশলে ঘৃণ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর সাজানো মিথ্যা মামলা-হুলিয়া জারির পাঁয়তারা করছেন তাদের প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করি। এরা আমাদের বন্ধু নয় শত্রু। এদের সমাজ ও মানবতার দুশমন হিসেবে চিহ্নিত করি। সম্প্রীতিময় কুলাউড়ার জয় হোক। অশুভ শক্তির বিনাশ হোক। বিনীত, আপনাদের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।’