রিপন দে, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারে প্রয়াত দুই কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান এবং সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। এই দুই নেতা প্রয়াত হলেও ভোটের মাঠে এখনো রয়েছে তাদের প্রভাব। তাই না থেকেও ভোটের মাঠে দুই জনেরই রয়েছে শক্ত অবস্থান।
প্রয়াত এম. সাইফুর রহমান মৌলভীবাজারের উন্নয়নের রূপকার। তার আমলেই মৌলভীবাজার জেলাব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে যার কারণে উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। অন্যদিকে প্রয়াত মহসিন আলীর সম্পর্ক ছিল আওয়ামী লীগের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূলে। মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মাঝে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশসম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত এই দুই নেতার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে নিজেদের পক্ষে ভোটারদের টানতে মরিয়া হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই প্রার্থী।
মৌলভীবাজারে উন্নয়নের প্রতীক এম. সাইফুর রহমানের ছেলে এম. নাসের রহমান এবার মৌলভীবাজার-৩ আসনে এক্যফ্রন্টের প্রার্থী। এই আসনে বারবার সাইফুর রহমান বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ব্যাপক উন্নয়নের কারণে সাইফুর রহমান এই এলাকায় এখনও জনপ্রিয়। তিনি জিয়ার মন্ত্রিভায় প্রথমে বাণিজ্যমন্ত্রী ও পরে অর্থমন্ত্রী হন।
বিএনপি সরকারের শাসনামলে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে বিএনপির প্রচারের প্রধান হাতিয়ার প্রয়াত সাংসদ এবং অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। তারা জানান, মৌলভীবাজারের ভোটাররা জানেন সাইফুর মৌলভীবাজারে যে উন্নয়ন করেছেন তা আগামী ১০০ বছরেও হবে না। সাইফুরের উন্নয়ন ফল আরও কয়েক যুগ মানুষ ভোগ করবেন। এসবের কারণে এবারও জনগণ তার ছেলে এম. নাসের রহমানকে ভোট দেবেন।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, ভোটের মাঠে মৌলভীবাজারের সব জায়গায় এবং সবচেয়ে বেশি প্রভাব সাইফুর রহমানের। তিনি যে উন্নয়ন করেছেন তা কেউ করতে পারবে না। ভোটাররা তা জানেন এবং জানেন বলেই ধানের শীষে ভোট দেবেন।
অন্যদিকে মৌলভীবাজারের মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসির আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা। তিনি তৃণমূলের সঙ্গে সব সময় সংযুক্ত থাকতেন। তিনি ছিলেন দানশীল। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নিজের পৈত্রিক সম্পদ বিক্রি করে মানুষের সেবা করেছেন।
প্রচলিত আছে, রাজনীতিতে মহসিন আলীর শক্তির উৎস ছিল সাধারণ জনগণ। যেকোনো প্রয়োজনে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ জনগণ যখন তখন থাকে পাশে পেত এবং মহসিন আলীও বিপদে আপদে নেতা কর্মীদের পাশে থাকতেন। যার কারণে তার বড় সংখ্যক অনুসারী রয়েছে মৌলভীবাজারের শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সৈয়দ মহসিন আলী ৩ বার জনপ্রিয়তা বজায় রেখে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৮ সালে প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই বিএনপির প্রতাপশালী রাজনীতিবিদ সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সমাজল্যাণ মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পান। আর দ্বায়িত্বরত অবস্থাতেয় মহসিন আলী ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের সেবা এবং আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছের নেতা হিসেবে ভোটের মাঠে মহসিন আলীর প্রভাব রয়েছে। তাই তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই আওয়ামী লীগ তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে চাইছে।
মহসিন আলী মারা যাওয়ার পর মৌলভীবাজার-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হন তার স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন। তিনিও এখন মহসিন আলীর অনুসারীদের প্রিয়জন। কিন্তু সায়রা মহসিন একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। এবার এ আসনে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ। মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনিসহ মহসিন অনুরাগীরা কাজ করে যাচ্ছেন নেছার আহমদের নৌকার পক্ষে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার জয়ে মহসিন আলীর ব্যাপক প্রভাব থাকবে। মহসিন আলীর জনপ্রিয়তা দলের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে। মহসীন আলীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে আমরা রাত দিন কাজ করে যাচ্ছি।