ফাল্গুনী বুন:
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘নাগরী : নবজীবনের জার্নাল’ বইটি মাত্র দিন কয়েক আগে সংগ্রহ করেছি। বইটির লেখক মোস্তফা সেলিমের নাগরীলিপি ও তার সাহিত্য নবজীবনের প্রচেষ্টার স্বাক্ষীসাবুদ তো আমরা নিজেরাই। আমাদের চোখের সামনেই একদশক থেকে তিনি এ নিয়ে উদায়স্ত শ্রমপাত করে চলেছেন। পুথি সংগ্রহ, গবেষণা, প্রকাশনা এবং সাংগঠনিক কাজে তিনি শ্রম ও মালকড়ি দুটোই অকাতরে ব্যয় করছেন। দিন পনের আগে যখন ফেসবুকে এরকম একটি বই প্রকাশিত হয়েছে, দেখলাম, তখন মোস্তফা সেলিম এই গল্পটিকে কীভাবে আমাদের জানান, তা জানতে মনটা কৌতূহলী হয়ে ওঠলো। চেনা গল্প একজন লেখকের মনোজগতে কীভাবে স্থান নেয়, তা জানার আগ্রহ থেকে বইটি সংগ্রহের চেষ্টায় নেমে পড়লাম। শেষ অবধি গত সপ্তাহে হাতে আসলো বইটি।
চমৎকার প্রচ্ছদে শোভিত বইটি একটানা পড়ে ফেললাম। স্বাদু গদ্য এবং লেখকের বলার ভঙ্গি এককথায় অনবদ্য। এ কারণে বইটি রেখে দেওয়ার সুযোগ ছিল না। নাগরীলিপি পুনরুদ্ধারের বা নবজীবনের এক নির্মোহ দলিল এ বইটিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সৎ চেষ্টটি লক্ষণীয়। লেখক স্থান কাল পাত্র ভেদে সকলকেই আন্তরিকতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। সকল মহলের অবদানের কথা লিখেছেন। ছোটবড় সকলের নানারকম ভূমিকাকে তিনি গুরুত্ব সহকারে বিবৃত করেছেন। দেশ বিদেশ যারা তাঁকে নাগরীলিপির নবজীবনের চেষ্টায় সহযোগিতা করেছেন, সকলের প্রসঙ্গই তিনি আলোচনা করেছেন তাঁর এই জার্নালে। প্রামাণ্যতার জন্য তিনি যথেষ্ট ছবি দিয়েছেন গ্রন্থে। কাজের সূচনার দিকের নানা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে যেমন খোলামেলা বক্তব্য পাই, তেমনই তাঁর ব্যক্তিগত ত্যাগের কথাও সংযতভাবে বলেছেন লেখক। সকল প্রকার মিডিয়াকে প্রচারে যুক্ত করার কৌশল ও চেষ্টাটি ছিল অভিনব। কীভাবে তা সম্ভব হল, তিনি সরল ভাষায় এ-গল্প আমাদের জানিয়েছেন গ্রন্থে। লেখক তাঁর গ্রন্থে, সকল শ্রেণির তৃণমূল পর্যায়কে যুক্ত করে তিনি মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। যারা তাদের অনুভব দ্বারা হয়তো নাগরীলিপি নবজীবনের পথে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে অণুপ্রাণিত হবেন দেশ বিদেশ। তবে নাগরীলিপি বিষয়ে ভবিষ্যত সুপারিশ ও প্রস্তাব সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও সুনিদির্ষ্ট ভাবে আশা করেছিলাম লেখকের কাছে। বইটি পড়ে মনে হলো, তা যদি তিনি করতেন, বইটি আরও সামগ্রিকতা পেতো। বইটি সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই একটা রেফারেন্স বুকের স্বীকৃতি পাবে, এ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।