খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনার পরে বাংলাদেশে আরও এক নারী রাজনীতিকের উত্থান হতে চলেছে বলে খবর দিয়েছে কলকাতার জনপ্রিয় আনন্দবাজার পত্রিকা।
সোমবার জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ, তারেক রহমানের স্ত্রী জুবায়দা রহমানকে নেতৃত্বে আনার বিষয়টি এক রকম চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপি।
কর্মীদের চাঙ্গা করে নতুন উদ্যমে ভোটের ময়দানে নামাতে এবং দলে জিয়া পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জিয়া পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, কারাবন্দি খালেদা এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। তারেকও সম্মত। পেশাদার চিকিৎসক বছর চল্লিশের জুবায়দাও ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, রাজনীতিতে নামতে তিনি প্রস্তুত।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূর রাজনীতিতে অভিষেক কেবল সময়ের অপেক্ষা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপি এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। টালবাহানার পরে রোববার বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু, দেরিতে মাঠে নামায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে তারা। পিছিয়ে ভাবমূর্তিতেও।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা খালেদা ও তারেক, দু’জনই দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত। চেয়ারপারসন খালেদা কারাগারে, তার ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেরার হয়ে লন্ডনে।
একটি মামলায় হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশের জেরে তাদের প্রার্থী হওয়া তো দূরের কথা, দলের নেতৃত্বে থাকাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জিয়া পরিবার থেকে জুবায়দার মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে দলের মাথায় আনলে ভোটারদের কাছে যেমন বার্তা দেয়া যাবে, দলের কর্মীরাও চাঙ্গা হবেন বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
জুবায়দা রহমান চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হন। পরে তিনি লন্ডনের ইম্পিরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন থেকে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি সম্পন্ন করেন।
তারেকের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া ভারতের কংগ্রেস যেমন চলতে পারে না, মাথায় শেখ পরিবারের কাউকে ছাড়া আওয়ামী লীগকে যেমন ভাবা যায় না, জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়াও বিএনপি টিকতে পারে না। দলের নেতৃত্বে তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো গ্রহণযোগ্য মুখ এনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ‘দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীরাও’। তা মেনেই জুবায়দাকে রাজনীতিতে আনার কথা ভাবা হয়েছে। সিলেট, ফেনী এবং বগুড়ার একাধিক আসনে প্রার্থী হিসেবে তার নাম রাখা হচ্ছে।
বিএনপির শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বা বগুড়া থেকে প্রাথমিক সদস্যপদ দিয়ে জুবায়দাকে আপাতত দলের ভাইস-চেয়ারম্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনী কাজে সমন্বয়ের দায়িত্বও তার হাতে ছাড়ার কথা ভাবা হয়েছে। আপাতত অস্থায়ী চেয়ারম্যান তারেকের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি দল চালাবেন।
পরিবার সূত্রের খবর, জুবায়দার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলি জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেনা-সরকারে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী জুবায়দার চাচা। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন।
তবে মনোনয়নপত্রে সই করা হয়তো এবারও জুবায়দার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তার পাসপোর্ট আপাতত লন্ডনে বাংলাদেশি হাইকমিশনের হাতে থাকায় ঢাকা ফিরতে সময় লাগবে। সে জন্য প্রচারের মঞ্চ থেকে তার ভিডিও-বক্তৃতা প্রচারের কথাও ভেবে রেখেছেন বিএনপি নেতৃত্ব।
এখন পোড় খাওয়া রাজনীতিক শেখ হাসিনার সঙ্গে লড়াইয়ে জিয়া পরিবারের এই নবাগত রাজনীতিক কতটা ছাপ ফেলতে পারবেন, সেটাই প্রশ্ন।