সিলেটের ওসমানীনগরে অজ্ঞাত এক নারীকে গলা টিপে মৃত্যু নিশ্চিতের পর মাটিচাপা দিয়ে লাশ গুম করা হয়েছে। ওই নারীকে বিয়ে করা নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গুম করার কথা আদালতে ১৬৪ ধারায় তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এর বিচারক কানন দেব তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া আসামিরা হলেন- উপজেলার দয়ামীর ইউপির খালপাড় গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর ছেলে আব্দুল বারিক (৪০), তার কথিত স্ত্রী জামালপুর জেলার ভাটি গজারিয়া এলাকার ওয়াহিদ আলীর মেয়ে নাসরিন বেগম পাখি, তার ভাগ্নে একই গ্রামের মইন উদ্দিনের ছেলে মাসুম মিয়া (২০)।
এছাড়া একই আদালতে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও মামলার প্রধান আসামি আবুল বারীকের মেয়ে ময়না বেগম (১৩), মোনালিসা (১০), আব্দুল বারিকের বোন নেহার বেগম (৩৮) ও দয়ামীর বাজারের পাহারাদার আব্দুল গনি (৫০) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসআই সাইফুল মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ওই নারী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উপজেলার দয়ামীর ইউপির খালপাড় গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর ছেলে আব্দুল বারিক (৪০), তার কথিত স্ত্রী নাসরিন বেগম পাখি, তার ভাগ্নে একই গ্রামের মইন উদ্দিনের ছেলে মাসুম মিয়া(২০) ও তাজপুর ইউপির মজলিসপুর গ্রামের জুনাব আলীর ছেলে সেলিম মিয়ার (৪০) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়।
আদালতের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এসআই মমিনুল ইসলাম তিন আসামির জবানবন্দির বিষয়ে বলেন, গত ৪ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে তিশা বেগমকে (আসামিদের দেয়া নাম, যা পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি) নিয়ে আসামি সেলিম দয়ামীরের খালপাড় গ্রামের আব্দুল বারিকের বাড়ি যায়।
সেলিম রাতে বারিককে দিয়ে মদ এনে বাসায় দুজনে পান করে। মদপানকালে তিশাকে সেলিম বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিশা বিয়েতে রাজি না হলে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
৫ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আব্দুল বারিকের শোবার ঘরে তিশার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে সেলিম মিয়া। এ সময় আব্দুল বারিক তিশার কোমড় ও দুই পা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ঘরের চালের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। রাতেই আব্দুর বারিকের কথিত স্ত্রী নাসরিন বেগম পাখি, তার ভাগ্নে মাসুম এবং আরও ৩-৪ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি রিকশা চালকের সহায়তায় দয়ামীর বাজারের কনাইশা (র.) মাজারের পশ্চিমে একটি খালি জায়গায় লাশ মাটিচাপা দিয়ে রাখে।
ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম আল মামুন তিন আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিরা নিহত নারীর যে নাম ঠিকানা দিয়েছিল তাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দয়ামীর বাজারের কনাইশা (র.) মাজারের পশ্চিমে একটি খালি জায়গা থেকে মাটিচাপা দেয়া এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।