সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী রাজাকারের সন্তান; এ বিষয়টি সর্বমহলে আলোচিত হলেও এবার সে আলোচনাকে নতুন করে জোরালো করলেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবু জাহিদ।
১৫ অক্টোবর সোমবার সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সামাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের পাশাপাশি তাঁর পারিবারিক অতীত তুলে ধরেন মো. আবু জাহিদ।
সংবাদ সম্মেলনে আবু জাহিদ দাবি করেন, সারাদেশে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলেও সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় গৃহীত প্রকল্প আটকে রয়েছে সাংসদের স্বেচ্ছাচারিতা ও একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে। এসময় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ কয়েছের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আবু জাহিদ। তিনি বলেন, এটা সর্বজন স্বীকৃত যে এমপি কয়েছের পিতা দেলোয়ার হোসেন ফিরু মিয়া একজন রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ফেঞ্চুগঞ্জের পশ্চিমবাজারে কাইয়ার গুদামে নিরীহ নারীদের নির্য়াতন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং নির্যাতন করেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা শান্তি কমিটির এই আহ্বায়ক। এসময় পিতার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বর্তমান সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ কয়েছ। সেসময় তিনি পাকবাহিনীর জিপে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ।
১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার ভরা ডুবি ঘটানোর অভিযোগ এনে আবু জাহিদ বলেন, ২০০৯ সালের নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হবার পর থেকেই নিজদলীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনঠাসা করে রেখেছেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সাংসদ মাহমুদ উস সামাদের বিতর্কিত ভুমিকার জন্য বিগত উপজেলা নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত হতে হয়। সেখানে নির্বাচিত হন দুজন জামায়াত প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে আবু জাহিদ নির্বাচিত হলেও তাকে সকল কাজে অসহযোগিতা করছেন সাংসদ। তার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় কাঙ্খিত উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এডিপির ১ কোটি টাকা ফেরত চলে গেছে, এছাড়া অলস পড়ে আছে কয়েক কোটি টাকা। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ থেকে গৃহীত ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প আটকে গেছে সাংসদের বিরোধিতায়। গত ২৮ আগস্ট উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থিত হয়ে সাংসদ বলেন, ‘নির্বাচনের পুর্বে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবেনা।’
উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ আরো অভিযোগ করেন, সিলেট থেকে বালাগঞ্জ ২২ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা থেকে উত্তরণে বিভিন্ন সময়ে নেয়া প্রকল্প আটকে আছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর, এ্যাম্বুলেন্সসেবা, চিকিৎসা সেবার পরিবেশ, দক্ষিণ সুরমা স্টেডিয়াম কোনোটিই বাস্তবায়িত হয় নি সাংসদের কারণে। বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল সরকারিকরণেও তাঁর ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া বিরোধীদলীয় সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া, বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া, নিজ দলীয় কর্মীদের আসামি করা এবং সর্বোপরি সরকার বিরোধীদের উস্কে দেয়ার অভিযোগও আনেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা পান্না, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজী রইছ আলী, মোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম শাইস্তা, মোগলাবাজার থানা আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন, তপন চন্দ্র পাল, জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম ইছনসহ দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।