মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে ১৫ হতদরিদ্র নারীর ক্ষুদ্র ঋণের সাড়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এক দলনেত্রী। গতকাল রোববার দুপুরে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্থ নারীরা।
ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের পক্ষে ডলি বেগম বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবত কয়েকটি এনজিও সঞ্চয়ী সমিতি উপজেলার সদর ইউনিয়েনের উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামের অর্ধ শিক্ষিত, দরিদ্র মহিলাদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় এলাকার দরিদ্রমহিলারা বিভিন্ন সমিতির কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা নিয়ে আসছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক গ্রামে একটি কেন্দ্র ও একজন করে কেন্দ্রপ্রধান করা হয়। সেই মোতাবেক একই গ্রামের আব্দুল জলিলের স্ত্রী লাইলী বেগম (৩৫) কে কেন্দ্র প্রধান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় বিগত ২ বছর আগে দলনেত্রী হবার সুবাদে লাইলী বেগম মহিলাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সমিতির কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ৮টি ক্ষুদ্র ঋণ সমিতি থেকে ১৫ জন নারীর নামে ৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে।
এ ঋণ উত্তোলন কালে সমিতির কর্মকর্তারা দলপ্রধানের কারণ দেখিয়ে সরাসরি লাইলী বেগমের হাতে ঋনের টাকা তুলে দেয় বলে অভিযোগ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ নারীরা জানান, টাকা তোলার সময় আমাদের নামে টাকা তুলে লাইলী বেগম মহিলাদের এই ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ সকল দায় দায়িত্ব সে নিজে বহন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এর ২ বছর পর গত কয়েক সপ্তাহ যাবত ব্র্যাক, ব্যুরো বাংলাদেশ, পল্লী দরিদ্র ফাউন্ডেশন, শক্তি ফাউন্ডেশন, সিসিডি, পাতাকুঁড়ি সোসাইটি, আগ্রহ উন্নয়ন সংস্থা ও আশার ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বাড়ি গিয়ে ঋণ কিস্তি পরিশোধের তাগিদ দেয়।
তারা জানান, এ ঘটনায় আমরা জানতে পারি বিগত ২ বছর দলনেত্রী লাইলী বেগম নিয়মিত ঋণ কিস্তি পরিশোধ করে আসছিল। এ বিষয়ে জানার জন্য আমরা সকল নারী সদস্যরা লাইলী বেগমের বাড়ি গিয়ে দেখি সে পালিয়ে গেছে।
এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়ের কাছে নালিশ করলে তার কাছ থেকে কোন সাহায্য পাননি বলে তারা জানান। পরে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের পক্ষে অর্চণা রানী বৈদ্য বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
তারা আরও জানান, এ দিকে বিভিন্ন সমিতির ঋণ আদায়কারীরা এসব প্রতারিত নারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে চাপ সৃষ্টি এবং উল্টো মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এ অবস্থায় আমরা চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে নারীরা প্রতারক লাইলী বেগমকে খুঁজে বের করতে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের নামে উত্তোলিত ঋণের টাকা ফেরত না পেলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্থ নারী শৈলী বৈদ্য, অর্চণা বৈদ্য, লক্ষী সূত্র ধর, সুফিয়া বেগম, ছয়ফুল বেগম, ডলি বেগম, আসমা বেগম, ছত্তারানী, আমিনা বেগম, রেনু বেগম, বানেছা বেগম, বেবী বেগম, সঞ্জু বৈদ্য, রহিমা বেগম ও সামসুন্নাহার উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কেএম নজরুল এব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, তবে অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সদর ৩নং ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়ের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান বিষয়টি দুঃখজনক।
তিনি বলেন, তবে আমি বলবো যারা টাকা দিয়েছে, আর যারা টাকা নিয়েছে এবং যে দলনেত্রী মাঝখানে প্রতারণা করেছে তারা সবাই খারাপ। এই তিন খারাপের মিশ্রণে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।