দেলোয়ার হোসাইন :: শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এক নগণ্য ‘মাঝারি মানের’ প্রাক্তন ছাত্র আমি। কলেজের গর্বিত প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাশ করেছি। এটা বলার মতো কিছু নয়, তবু বলছি। কেননা বর্তমান অধ্যক্ষকে মনে করিয়ে দিতে চাই, সে সময় আমি দু’জন প্রধান শিক্ষকের ছাত্র ছিলাম। আছদ্দর আলী স্যারকে এক থেকে দেড় বছর পেয়েছি, বাকিটা সময় মরহুম খলিলুর রহমান স্যারের ছাত্র ছিলাম। এই দু’জন সাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে বর্তমান অধ্যক্ষ্যের নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা, আচরণ, নিয়মানুবর্তিতা, নৈতিকতা, সাংস্কৃতিক জ্ঞান সম্পর্কে যখন তুলনামূলক আলোচনা করি তখন আমার মতো নগণ্য এক যুবকেরও হতাশা বাড়ে।
আমি ‘চ্যালেঞ্জ’ করলাম। বর্তমান অধ্যক্ষ আব্দুল বাছিত সাহেব এই প্রতিষ্ঠানে আসার পর থেকে যতগুলো অনিয়ম আর দুর্নীতি হয়েছে, তার সিকি ভাগও যদি অন্য দু’জন সাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেলায় দেখাতে পারেন তাহলে আমি দেলোয়ার হোসাইন সাংবাদিকতায় নিজেকে অযোগ্য ঘোষণা করবো।
আসুন সব শেষ ঘটনা দিয়ে শুরু করি। শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা কমিটির নির্বাচন সামনে রেখে তালিকা থেকে ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে একটা নিউজ প্রকাশিত হয়।
এ নিউজে যেটা লেখা হয়নি সেটার কথা বলি- অধ্যক্ষ প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান স্যারের মুখের কথা বিশ্বাস করেন না। যখনি বলা হলো ‘ওকে ডান’। তাহলে প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বৈধ ভোটার হিসেবে উনার নাম আসলো না কেন? এই প্রশ্নে তিনি মেজাজ দেখালেন, উগ্র আচরণ করলেন। এই উগ্রতার মানে কি? উনার শক্তি কোথায়? প্রশ্নটা শাহবাজপুরের অভিভাবকদের কাছে।
নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে অধ্যক্ষের দৌঁড় শুরু হলো! তিনজনের একটি শিক্ষক প্রতিনিধি দল মঈন উদ্দিনের সাথে দেখা করলেন। বললেন, বিষয়টা ভুলে হয়ে গেছে। আপনার সাথে আমরা বসতে চাই, বসে সমাধান করা হবে। ক্ন্তিু মঈন উদ্দিন একটা শর্ত দিলেন, এই অধ্যক্ষের সাথে উনি বসবেন না। তবে অন্য স্যারদের সাথে বসতে উনার কোনো আপত্তি নেই। এই শর্ত মেনে বিষয়টা সমাধানের পথে আছে…
তো গাছের কথা বলি। প্রতিষ্ঠানের একজন সিনিয়র শিক্ষক ও সাবেক এক অভিভাবক প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছিলাম। শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম গাছ বিক্রির বিষয়ে উনাদের কোনো ভূমিকা নেই। এটা অধ্যক্ষ এবং পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত। সাবেক সদস্যকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। কোনো কথা বলেননি। তখন প্রশ্ন করেছিলাম তাহলে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আপনারা কি ভূমিকা নিয়েছিলন? উত্তরে উনি বলেছিলেন, একদিনে ২০টি ফ্যান লাগিয়েছেন! আরো কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম। উনি উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে যান। তবে উনি ভালো একটা কথা বলেছিলেন- উনার দুই বছরে উনি ক্যাম্পাসে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিলেন।
এবার ‘ভালোবাসা দিবস’কে একটু প্রমোট করি! ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে নানা রকম ‘ফ্রেম’ ব্যবহার করা যায়। এ রকম একটা ফ্রেমের নাম ‘Happy Valentine’s Day’। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি উনি প্রোফাইল পিকচারে এ রকম একটা ফ্রেম ব্যবহার করেছেন। বলে রাখি, এই ‘ভ্যালেন্টাইন’র ইতিহাস কেবল প্রেমিক আর প্রেমিকার। দেশের সচেতন শিক্ষকদের কাছে এই বিষয়ে আমি জানতে আগ্রহী। এটা কি নৈতিক অধঃপতন নয়? যদি না হয়, তাহলে আমি আমার ভুল স্বীকার করে নিয়ে আপনারা যে শাস্তি দিবেন তা মাথা পেতে নিবো, তবে শর্ত হলো ক্যাম্পাসে ‘ভ্যালেন্টাইন’র অবাধ স্বাধীনতা দিতে হবে। আর যদি এটা ‘লজ্জা’র ব্যাপার হয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের কাছে বিচার রাখলাম…
দুপুর ১২টার পরে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শাহবাজপুর বাজারে ঘুরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা অধ্যক্ষকে ফোন করে বিষয়টি বলেছিলেন। অধ্যক্ষ উত্তরে বলেছিলেন- ‘ধানের সব হার (শীষ) হয় না, কিছু ছুছা (চিটা) থাকে, এরা ছুছা! আমরা জানি ধানের ছুছা ফেলে দিতে হয়। এটা কোনো কাজে আসে না। তো উনি ‘ছুছা’ চিনেন। ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না কেন?
এবার গত ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে আমার একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে দিলাম। সেই সাথে এই লেখা সংশ্লিষ্ট তিনটি স্ক্রিন শট দিলাম।
‘হেই, তরে আইজ ইলা লাগে খেনেবে, তর কিতা অইছে’
শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ’ এলাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ। আমাদের অহংকারের জায়গা। আমরা যারা এখানের ছাত্র ছিলাম, দু’চার কলম পড়েছি- তা নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। অথচ প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থা কতটা নিম্নমুখী তা হয়তো অনেকেই জানেন না। আর যারা জানেন তাঁরা কেন নীরব তা আমি জানি না…
আমরা যখন স্কুলের ছাত্র ছিলাম- স্যারদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ছিলো, সম্মান ছিলো, ভালোবাস ছিলো, ভয়ও ছিলো। আমাদের প্রতি স্যারদের আন্তরিকতার কোন অভাব ছিলো না, শাসনও ছিলো বটে… বড় ভাইদের প্রতি আমাদের ভয় ছিল, সম্মান ছিল। আমাদের প্রতি তাদের স্নেহ ছিল, শাসন ছিলো। আর এখন…?
স্যার ক্লাস নিচ্ছেন আর ছাত্ররা মোবাইলে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত…! স্যার পড়া দিয়ে ক্লাসে হাঁটাহাঁটি করছেন আর ছাত্ররা স্যারকে উদ্দেশ্য করে শিয়ালের মতো করে হুক্কা হুয়া হুয়া হুয়া, কুকুরের ঘেউ ঘেউ করছে… স্যার তা শুনে টেবিলের সামনে এসে বলছেন ‘তোদের জন্মের ঠিক নেই’! শুনেছি স্যারকে মারার জন্য ছাত্ররা ক্লাসে গ্রুপিং করে। আর ক্লাসের বাহিরে (বাজারে) কি করে ছাত্ররা সেটা অনেকেই দেখেছেন, অনেকেই জানেন…
মাস্টার রোলে নিয়োগ পাওয়া এক ম্যাডাম ছাত্রীদের ক্লাসে বলছেন ‘হেই, তরে আইজ ইলা লাগে খেনেবে, তর কিতা অইছে’।
স্কুলের অনিয়ম নিয়ে আরো অনেক তথ্য আমার কাছে আছে, আমিও আরো তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। একদিনে সব লিখতে চাইনা…
সম্পাদক, লাতু এক্সপ্রেস