বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

উত্তর আমেরিকার বাঙালিদের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত



বিজ্ঞাপন

সামাদ ইসলাম, টরন্টো:: ইতিহাস গড়ল টরন্টোর বাঙালি সম্প্রদায়। প্রথমবারের মতো অন্টারিও লেকের জলে ধর্মীয় সব আচার-অনুষ্ঠান মেনে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করা হলো। পরিবেশবান্ধব ও প্রশাসনিক সব বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে মেনে সম্পন্ন হওয়া এই আয়োজন উত্তর আমেরিকার বাঙালিদের জন্য হয়ে উঠেছে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে টরন্টো দুর্গাবাড়ি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে, এ বছর মা দুর্গার বিসর্জন অনুষ্ঠিত হবে উডবাইন বীচে, অন্টারিও লেকের জলে। এই ঘোষণার পর থেকেই শুধু জিটিএ নয়, সমগ্র উত্তর আমেরিকার বাঙালিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশা।

দশমীর দিন সকালে সিঁদুর দানের পর দুর্গাবাড়ি মন্দির থেকে মা দুর্গার রেপ্লিকা একটি ট্রাকে করে নেওয়া হয় উডবাইন বীচে। ড্যানফোর্থ এভিনিউ ধরে চলা এই যাত্রায় অংশ নেন শতাধিক গাড়িতে ভক্তরা। সিঁদুরে রাঙানো তাদের চোখে ছিল মাতৃবিদায়ের বেদনা, আর মনে ছিল বিদেশের মাটিতে দেশীয় সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনের বিজয়ের আনন্দ।
উডবাইন বীচে আগেই নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় উপস্থিত ছিলেন টরন্টো পুলিশের সদস্যরা। প্রতিমা ও নবপত্রিকা ট্রাক থেকে নামানোর পর ঢাক-ঢোল, কাসরের সুরে উৎসবের আবহে মেতে ওঠে প্রায় এক হাজার দর্শনার্থী। সেই মুহূর্তে উডবাইন বীচ রূপ নেয় বাংলাদেশের কোনো নদীতীরে বিসর্জনের পবিত্র তীর্থভূমিতে।

স্টেজে প্রতিমা স্থাপন করে ভক্তরা আরতি ও নৃত্য-গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। এরপর ধর্মীয় আচার অনুযায়ী প্রথমে নবপত্রিকা জলে স্পর্শ করানো হয় এবং পরে পরিবেশবান্ধব উপকরণে তৈরি মা দুর্গার রেপ্লিকা জলে নামিয়ে বিসর্জন সম্পন্ন করা হয়। পরিবেশ দূষণ রোধে প্রতিমাটি পরে জল থেকে তুলে আনা হয়।

এই মহতী অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র গ্রেটার টরন্টোর বাঙালিরাই নয়, এজাক্স, পিকারিং, মার্কহাম, মিসিসাগা, গুয়েলফ, ব্রাম্পটন, হ্যামিল্টন, বেরি, কিচেনার ও অন্যান্য দূরের শহর থেকেও বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর আমেরিকার মাটিতে দেশের মতো করে ধর্মীয় আচার পালনের এই উদ্যোগকে অনেকেই “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করেছেন। টরন্টো দুর্গাবাড়ির এই পদক্ষেপকে শুধু একটি সাংস্কৃতিক সাফল্য নয়, বরং প্রবাসে বাঙালি পরিচয়ের গর্বিত পুনর্নির্মাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বিসর্জনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে উত্তর আমেরিকার বাঙালি সমাজকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করবে-এমনটাই আশা সবার।