আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের শ্যালক কামাল উদ্দিনকে ‘বর্বরভাবে’ হত্যা করেছেন দুলাভাই মাখন মিয়া। এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন পুলিশের অভিযানে আটক কামাল হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন ফারুক মিয়া।
বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় কামাল হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি। এর আগে ৭ জানুয়ারি সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার গুচ্ছগ্রাম থেকে ফারুককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফারুক বানিয়াচংয়ের হরিপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে।
হবিগঞ্জের এএসপি (নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেল) পারভেজ আলম চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফারুকের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এএসপি জানান, দীর্ঘদিন ধরে হরিপুর গ্রামের মাখন মিয়া ও বজলু মিয়ার মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দু’পক্ষের সংঘর্ষে বজলু মিয়ার ছেলে ফজল মিয়া মারা যান। ছেলে হত্যার ঘটনায় প্রতিপক্ষ মাখন মিয়াসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন বজলু মিয়া। এ মামলায় মাখনের বেশ কয়েকজন লোক গ্রেফতার হন।
তিনি আরো জানান, লোকজন গ্রেফতারের প্রতিশোধ নিতে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ বাড়িতেই গোপন বৈঠক করেন মাখন মিয়া। গোপন বৈঠকে শ্যালক কামালকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর ছক আঁকেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে নবীগঞ্জের লহরজপুরের হাওরে কামালকে মাছ ধরতে নিয়ে যান মাখন। সেখানে নদীর পাশে ধানক্ষেতে ফিকলের আঘাতে কামালকে হত্যা করেন তিনি। ওই সময় সঙ্গে থাকা লোকজনসহ তিনি চিৎকার করে বলেন, বজলু মিয়ার লোকজন কামালকে হত্যা করে চলে গেছে।
কামাল নিহতের তিনদিন পর তার বোন ও পরিকল্পনাকারী মাখনের স্ত্রী বাদী হয়ে বজলু মিয়া পক্ষের ২৭ জনকে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এতে তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু ঘটনার পরই মাখন, ফারুক, শরীফ, লেবুসহ বাদীর স্বজনরা গা ঢাকা দেন। এতে পুলিশের সন্দেহের তীর বাদীপক্ষের দিকে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানান, নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজের শ্যালককে বর্বরভাবে হত্যা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তারা অপরাধীদের বিচার দাবি করেন।
নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মাখন মিয়া পক্ষের ইসলাম উদ্দিনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর ৭ জানুয়ারিতে গ্রেফতার ফারুক আদালতে কামালকে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। হত্যার পরিকল্পনাকারী মাখনসহ বাকিদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।