হজ্ব পালনকারী ও দর্শনার্থীদের কাছে পরম আগ্রহের বিষয় হচ্ছে মহানবীর (সাঃ) পবিত্র বাসগৃহ এবং তার দুই সাহাবী হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর ইবনে আল-খাত্তাবের মাজার জিয়ারত। ‘সেকরেড চেম্বার’ বা পবিত্র বাসগৃহ হিসেবে পরিচিত গৃহে মহানবী (সাঃ) হযরত আয়েশাকে নিয়ে বাস করতেন। এটা মসজিদে নববীর দক্ষিণ পূর্বাংশে অবস্থিত। যখন মহানবী (সাঃ) হযরত আয়েশার কক্ষে ইন্তেকাল করেন, তখন তার সাহাবীরা ভাবনায় পড়েন কোথায় তাকে দাফন করা হবে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি মহানবীকে বলতে শুনেছেন যে, ‘নবীদের দাফন করা হয় সেখানে যে স্থানে তারা মারা যান।’। তাই পবিত্র বাসগৃহের দক্ষিণাংশে তাকে দাফন করা হয়।
মহানবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পরেও হযরত আয়েশা ঐ বাসগৃহের উত্তরাংশে বাস করতে থাকেন। যখন তার পিতা হযরত আবু বকর ইন্তেকাল করেন, তখন তাকে মহানবী (সাঃ) এর কবরের পাশে দাফন করা হয়। আয়শার বাসস্থান ও রওজার মধ্যে কোন দেয়াল বা বেড়া ছিলো না। কারণ কবরগুলো ছিলো তার স্বামী ও পিতার। যখন দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাব ইন্তেকাল করেন, তখন আয়েশা মহানবী (সাঃ) ও হযরত আবু বকরের কবরের পাশে তাকে দাফনের অনুমতি দেন।
যা-ই হোক হযরত ওমরের প্রতি তার শ্রদ্ধা স্বরূপ হযরত আয়েশা কবরসমূহ ও তার বাসস্থানের মধ্যে একটি পার্টিশন তুলে স্থানটিকে আলাদা করে নেন। কারণ ওমর একজন ‘মাহরাম’ (যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ) ছিলেন না। সেকরেড চেম্বার বা মহানবী (সাঃ) বাসগৃহকে ‘প্রোফেটিক কম্পার্টমেন্ট’ও বলা হয়। এর ৬ টি দরোজা রয়েছে। দক্ষিণাংশের দরোজা হচ্ছে ‘অনুশোচনার দরোজা’। এখানে বর্তমানে রয়েছে একটি রূপার প্লেট বা পাত, যা ১৬১৭ সালে তৈরী। উত্তরাংশের দরোজাটির নাম ‘তাহাজ্জুদের দরোজা’ এবং পূর্বাংশের দরোজা হচ্ছে ‘ফাতিমার দরোজা’। পশ্চিমাংশের দরোজা ‘নবীর দরোজা’ হিসেবে অভিহিত। এটাকে ‘প্রতিনিধির দরোজা’ও বলা হয়।
বাসগৃহটি অনেক সংস্কারের মধ্যে দীর্ঘকাল পেরিয়ে এসেছে ৬৩৮ সালে মসজিদে নববীতে হযরত ওমরের শুরু করা সংস্কার কার্য থেকে। হযরত ওমর বাসগৃহে খেজুর গাছের পাতার আচ্ছাদনের স্থলে দেয়াল নির্মাণ করেন। আল ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক ৭০৭ সালে মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন। অষ্টম উমাইয়া খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বাসগৃহটি কালোপাথর দিয়ে তৈরী করেন এবং অত:পর একটি পঞ্চভুজ দেয়াল তৈরী করেন, যাতে এটা কা’বা সদৃশ না হয়। ১১৬২ সালে বাদশাহ নুরুদ্দীন চেম্বার বা গৃহের চারদিকে একটি পরিখা খনন করে এটা গলিত সীসা ঢেলে পূর্ণ করে দেন, যাতে কেউ সুড়ঙ্গ করতে না পারে।
এরপর ১২৬৯ সালে বাদশাহ বাইবারস্ বেষ্ঠনীসহ একটি কাঠের কেবিন তৈরী করেন এবং এতে ৩ টি দরোজা রাখা হয়। ১২৯৪ সালে বাদশাহ জয়েনুদ্দীন কিতবুঘা কেবিন বা কক্ষের বেড়া সম্প্রসারিত করেন যতক্ষণ না এটা মসজিদের ছাদে পৌঁছে। ১২৭৯ সালে সুলতান মুহাম্মদ বিন কালাউন সালহী কক্ষের উপরে একটি গম্বুজ তৈরী করেন। এটা গোড়ায় ছিলো চৌকোণাকৃতির এবং শীর্ষে আটকোণ বিশিষ্ট। গম্বুজটিকে দস্তার দ্বারা লেমিনেটেড বা মুড়ে দেয়া হয়। ১৪৭৬ সালে আর-নাসির হাসান ইবনে মোহাম্মদ ইবনে কালাউন গম্বুজটি সংস্কার করেন। এভাবে আরো বেশ কিছু সংস্কার শেষে ১৮১৭ সালে সুলতান মাহমুদ বিন আবদুল হামিদের শাসনামলে সর্বশেষ পুন:নির্মাণ করে এর বর্তমান রূপ দেয়া হয়। উসমানীয় সুলতান আবদুল হামিদ মহানবীর (সাঃ) রওজা মুবারকের উপরিস্থিত গম্বুজটি সবুজ রংয়ে রঙিন করেন।
মূল: আরব নিউজ
অনুবাদ: নিজাম উদ্দীন সালেহ