দীর্ঘদিন ধরেই সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সজ্জন রাজনীতিবিদ ইনাম আহমদ চৌধুরী। সেই স্বপ্ন ও ইচ্ছা থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সাবেক এ আমলা ও কূটনীতিক।
এ অবস্থায় দল ওই আসনে দুজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। একজন ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অন্যজন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মুক্তাদির।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী মর্যাদার এ আসনে মনোনয়ন পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। নেতাকর্মীদের সংগঠিতও করেছিলেন।
পরে এ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দেয় বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। বয়স ও পদবিতে জুনিয়রের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে পরাজয়কে মেনে নিতে পারছিলেন না বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ।
এর পর মনোনয়ন নিয়ে কিংবা দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি ইনাম। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটি দহন কাজ করছিল তার মনে। অবশেষে সেটিরই প্রকাশ ঘটল।
এছাড়া মনোনয়ন পাওয়ার পর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বাসায় যাওয়া নিয়ে অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানালেও বিএনপির একটি অংশ এটা নিয়ে জল ঘোলা করে এবং তাকে নানাভাবে হেয় করা হয়। এ বিষয়টিতে তিনি বেশ আঘাত পেয়েছেন।
এসবের কারণে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দল বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন ড. ইনাম আহমেদ চৌধুরী। সাবেক এ আমলা ও কূটনীতিক বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।
জানা গেছে, মান-অভিমান ও পাওয়া না পাওয়ার বেদনা কাজ করেছে ইনাম আহমেদ চৌধুরীর দল ছাড়ার পেছনে। এসবের হিসাব-নিকাশে বেশ কয়েক দিন ধরেই এক ধরনের যন্ত্রণা ভর করেছিল প্রবীণ এ রাজনীতিবিদের মনে।
অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে তার দলে যোগ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপির গত কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন। সর্বশেষ কাউন্সিলে তার পদোন্নতি হয়। তাকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় না হলেও বিভিন্ন ফোরামে বিএনপির হয়ে কথা বলতেন তিনি। টেলিভিশন টকশোতেও তাকে প্রায়ই দেখা যেত।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।
অর্থনীতিতে স্নাতক এ মেধাবী পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে সরকারি চাকরি শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশ সরকারে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি।
ইনাম আহমেদের ভাই ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ তাদের ভগ্নিপতি।
ইনামের বড় ভাই ফারুক আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে ইনাম আহমেদের গোটা পরিবারই আওয়ামী লীগ ঘরানার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর আত্মীয়। কিছু দিন আগে মনোনয়ন পেয়ে মুহিতের বাসায়ও গিয়েছিলেন তিনি।