কাজী রমিজ:
এবাদুর রহমান চৌধুরী। তিনি যে বড়লেখার মাটিও মানুষের নেতা, এটা তাঁর ঘোর নিন্দুকরাও স্বীকার করেন। বয়স হওয়ার কারনে তৃনমূল পর্যায়ে বিগত সময় আশানুরূপ সময় দিতে পারেননি দেখে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের মৃদু অভিমান আছে ঠিকই। কিন্তু সকলের হৃদয়ের গভীরতম অংশে এবাদুর রহমান চৌধুরীর জন্য অপরিসীম ভালোবাসাও বিদ্যমান। তাই হয়তো শেষ সময়ে এসে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারনে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় দল ও জোটের সাথে সাথে মনোকষ্ট পেয়েছেন পুরো বড়লেখা ও জুড়ীবাসী। বড়লেখার শিক্ষা, যোগাযোগ, অবকাঠামোসহ তাবদ উন্নয়নে এবাদুর রহমান চৌধুরীর অবদান বিরোধী শিবিরও স্বীকার করে। বড়লেখা জুড়ীর উন্নয়নে তাঁর সুচিন্তিত কর্ম পরিকল্পনা, তাঁর উন্নয়ন কখনো মানুষের হৃদয় থেকে মুছে যাবার নয়।
এবাদুর রহমান চৌধুরীর যে সমালোচনা নেই তা বলব না। কিন্তু তাঁর যোগ্যতা, নেতৃত্ব, উন্নয়ন ও জনবান্ধব চিন্তা এসব তার সমালোচনার পাল্লাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই হয়তো এই মহান লোকটির ভোটের রাজনীতি থেকে এমন বিদায়ে বড়লেখা ও জুড়ীর সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে অশ্রুপাত হচ্ছে। একজন এবাদুর রহমান হুটহাট করে বা একদিনে তৈরি হয়না। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িয়েছিলেন দেশপ্রেমের মহান ব্রত নিয়ে। আর পেছনে ফিরে তাকাননি। দল, গণমানুষের ভালোবাসা পেয়ে অাজীবন জনতার সেবা করেছেন। সাতবার এলাকার মানুষের মনোনীত পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন। চারবার এমপি হয়েছেন। উন্নয়নে সমৃদ্ধ করেছেন অবহেলিত এই জনপদকে। যোগ্যতা ও কর্মের স্বীকৃতিস্বরুপ মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তবু এই নিরহংকারী মানুষটিকে উচ্ছাকাংখা ছুঁতে পারেনি। বরাবরই সাধারন জীবনযাপন করেছেন। সাধারন মানুষের কাতারে মিশে তাদের জন্য কাজ করেছেন জীবনের পুরো সময় ধরে। আধুনিক বড়লেখা গড়ার পেছনে তাঁর অবদান বড়লেখার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
এবাদুর রহমান চৌধুরীর অসংখ্য গুনগ্রাহীর মত আমিও ব্যাতিত ও মানসিকভাবে আহত জনাব চৌধুরীর নির্বাচন না করা ও রাজনীতি থেকে এক প্রকার এ বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্তে। কারণ রাজনীতিতে শতবছরেও একজন এবাদুর রহমান চৌধুরীর শুন্যতা পূরণ হবে না। এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালে তাঁর চোখে দল ও জোটের উর্ধ্বে ছিল সাধারণ মানুষ। তাই বিরোধীমতের অনেক লোকের দুর্দিন ও দুঃসময়েও এগিয়ে এসে তিনি বারবার তাঁর মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এক কথায় পুরো বড়লেখা ও জুড়ীকে তিনি তাঁর পরিবার মনে করতেন। এজন্যই আজ জনাব চৌধুরীর রাজনীতি থেকে বিদায়কে মেনে নিতে পারছে না বিএনপি, জোট এমনকি বড়লেখাবাসী।
দলের, জোটের এমনকি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে আর দশজন ডানধারার মানুষের মত আমিও ধানের শীষের প্রার্থী জনাব নাসির উদ্দিন মিঠুকে ভোট দেবো। ধানের শীষে ভোট দিতে স্বজন শুভাকাংখীদের প্রলুব্ধ করবো। কিন্তু এবাদুর রহমান চৌধুরী না থাকার কষ্ট ঘুছবে না।
আমারও একটি দল আছে এবং সেটি এবাদুর রহমান চৌধুরীর দল নয়। কিন্তু ছোটকাল থেকেই এবাদুর রহমান চৌধুরীর বলিষ্ট নেতৃত্ব, উন্নয়ন, গণমুখী চিন্তা আমাকে আকৃষ্ট করে। তাই দল মতের উর্ধ্বে উঠে সকল সমালোচনাকে পাশ কেটে এবাদুর রহমান চৌধুরীর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে নিজেকে মনে করতাম এবং অদ্যবদি তাই করি। সর্বপরি এ কথাই বলতে পারি দেশটা যদি এবাদুর রহমানের মতো উন্নয়নমুখী নেতৃত্বে ভরে যেত তবে এই দেশ সিঙ্গাপুর হতে পারতো।
জনাব এবাদুর রহমান চৌধুরী,
দল-মতের উর্ধ্বে বড়লেখা-জুড়ীবাসীর শ্রদ্ধার জায়গাটুকু অাপনার অবর্তমানে বহুকাল শুন্যই থাকবে। ভোটের রাজনীতিতে না থাকলেও অাপনি থাকবেন লাখো মানুষের ভালবাসায়। অামাদের মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে। বড়লেখা ও জুড়িবাসী তাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে আপনার কথা আপনার উন্নয়নের কথা, শিক্ষা বিস্তারে আপনার অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। রাজনীতিতে না থেকেও আমাদের অভিবাবক হয়েই থাকুন। আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা।
ফেসবুক থেকে নেওয়া