রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দল নয় : অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন



বিজ্ঞাপন

এ. জে লাভলু:: বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময় মানুষের পাশে থাকে, মানুষের কথা বলে। বিএনপি হলো সেই দল, যারা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কাজ করছে। আমাদের পরিচয় একটাই-আমরা সবাই বাংলাদেশি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই এই পরিচয় আমাদের দিয়েছেন।

শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন ছিল। তার সুস্থতার জন্য যারা দোয়া, রোজা, সাদকা, ওমরাহ ও তাওয়াফ করেছেন তাদের প্রতি আমরা দলের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

জাহিদ হোসেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, আমরা ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদসহ হাজার হাজার ভাইকে হারিয়েছি। অনেকেই গুম হয়েছেন, অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকাল অনেকেই এমন ভাষায় কথা বলেন, যা গণতন্ত্রের ভাষা নয়; বরং কর্তৃত্ববাদী শাসকের ভাষা। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে। ছাত্র-যুবসমাজের ভবিষ্যৎ, দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিচারব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী দল তার প্রত্যেকটি ইউনিটে তৃণমূলের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কীভাবে দলকে সংগঠিত করা যায় সেই চর্চা করছে। আপনারাও বড়লেখায় সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদককে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু শুধু সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক-যাদেরকে আপনারা ভালো মনে করবেন তাদেরকে আপনারা দায়িত্ব দিবেন। কখনই ভাববার কারণ নেই। আপনারা জয়ী হয়েছেন। আরেকজন পরাজিত হয়েছেন। মনে রাখবেন এটা বিএনপির কাউন্সিল। আজকে আমরা ভোটাভুটি করব। ভোটাভুটি শেষে আমরা আবার মিলে যাব।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় সম্মেলন প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জিকে গউছ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য নাসের উদ্দিন মিঠু, কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু, বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন।

জাহিদ হোসেন একটি দলকে ইঙ্গিত করে বলেন, কেউ কেউ ধর্মের কথা বলেন, কিন্তু কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকে না। এটা আমাকে কষ্ট দেয়। আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন-জনগণের মধ্যে আপনার অবস্থান কী, কখনও কি জনগণ আপনাদের ওপর আস্থা রেখেছিল? বিএনপি সেই দল, যারা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পালায়নি, আত্মসমর্পণ করেনি; অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে এবং দেশকে স্বাধীন করেছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি সেই দল, যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাকশালের কবরের উপর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দল নয়। তাই বিএনপির সমালোচনা করবেন, তবে সেটা হোক বাস্তবসম্মত, বিভ্রান্তিকর নয়।

অধ্যাপক জাহিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রনেতারা নারীদের অপমান করে সেঞ্চুরি করেছে, তখন আপনাদের ইসলাম কোথায় ছিল? আজকে গাজায় হাজার হাজার মানুষকে ইসরাইল মেরেছে। তখন কোথায় থাকে আপনার ইসলাম। আপনি রাস্তায় নামেন না। কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেন না। আপনারা ইসলামের কথা বলবেন আন মানুষের পাশে দাঁড়াবেন না। হালুয়া-রুটি খাবেন। নাচানাচি করবেন। কাজেই বিএনপির সমালোচনা করবেন একশ বার। কিন্তু সেই সমালোচনা হতে হবে বাস্তবধর্মী।

মুরাদনগর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মুরাদনগরে যখন তিনজন মারা গেল। তখন পত্রিকায় কেউ কেউ লিখে দিলেন, সরকারের পক্ষের এবং বিপক্ষের। ওই তথাকথিত ইসলামিক দলের নেতৃবৃন্দ বলার চেষ্টা করলেন বিএনপি জড়িত। তদন্তে দেখা গেল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জড়িত। চাঁদপুরে ইমামকে সাহেবকে কুপানো হল। সেটা চাপিয়ে দেওয়া হল বিএনপির ওপর। তদন্তে দেখা গেল এটা বিএনপির আশেপাশের কেউ না। কাজেই আপনাদের বলব, দয়া করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। আপনারা যখন দেখেছেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। শুধু বিএনপি নয়, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক শক্তির নেতাকর্মীরাও ৩১ দফার ভিত্তিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। এ কারণেই আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, কারণ আপনারা জানেন আগামী দিনে জনগণের রায় কোনদিকে যাবে।

জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা তো সেই দল যারা স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও গিয়েছিলেন। আজ আবার জনগণের পক্ষে কথা বলেন। ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আমরা চাই, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ছিলাম, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ আসবে, ইনশাআল্লাহ আমরা তা অর্জন করব। অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে যে আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা তাতে আস্থা রাখতে চাই। তাই বিভেদ নয়, কাদা ছোড়াছুড়ি নয়-জনগণের মনের ভাষা বুঝুন, জনগণের কাছে যান। আমরাও ৩১ দফা নিয়ে গিয়েছি, আপনারাও যান। জনগণ যাকে ভালোবাসবে, তাকেই গ্রহণ করবে।