এ.জে লাভলু:: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে নারী-শিশুসহ ১০ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল সাতটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চন্ডিনগর এলাকায় স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করেন।
অভিযোগ উঠেছে, আটকের পর স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বড়লেখা থানায় জানালেও পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। উল্টো থানার ডিউটি অফিসার এএসআই দুলাল সরকার যাচাই-বাছাই করে তাদের বাঙালি হলে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলে স্থানীয় লোকজন তাদের ছেড়ে দেন। তবে বিজিবি বলছে, আটকের পর স্থানীয় লোকজন বিষয়টি তাদের জানালে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের আটক বা যাচাই-বাছাই না করে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে এ প্রবণতা কোনোভাবেই বন্ধ হবে না। ভবিষ্যতে এ কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চন্ডিনগর এলাকার বাসিন্দা আজাদ বাহার জামালী নারী-শিশুসহ ১০ জনকে দেখে সন্দেহজনক মনে করে তিনি তাদের আটক করেন। পরে বিষয়টি তিনি মুঠোফোনে বড়লেখা থানা পুলিশকে জানান। এসময় জামালীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নজরুল ইসলাম নামে স্থানীয় বাসিন্দা বড়লেখা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই দুলাল সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। দুলাল থানায় গাড়ি নেই জানিয়ে আটককৃতদের থানায় নিয়ে আসার কথা বলেন। নজরুল আটককৃতরা বাঙালি হলে ছেড়ে দেবেন কিনা জানতে চাইলে এএসআই দুলাল সরকার বাঙালি হলে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেন। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানান। তবে স্থানীয়রা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নামপরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- জান্নাতি, সোহাগ মোল্লা, নার্গিস, মিঠু, ফাতিমা বেগম, ইউনুস, ইয়াসিন, জাহিদ, রুহি বেগম, মিন্টু, শিশু ইউসুফ ও আরিয়ান। আটককৃতদের বাড়ি নড়াইল জেলায়।
এবিষয়ে ৫২ ব্যাটালিয়ন (বিয়ানীবাজার)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক চৌধুরীর শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমরা যখন শুনেছি ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। যারা অনুপ্রেবশ করেছেন, তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। আটকের পর তাৎক্ষণিক বিজিবিকে জানালে তাদের আটক করা যেত। তারা কোন সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি বিষয়টি শুনার পর বিজিবির স্পেশাল একটি টিমকে চন্ডিনগর এলাকায় পাঠিয়েছেন। আর কেউ ওই এলাকায় আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রেবশ ঠেকাতে বিজিবি সবর্দা সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিএসএফের ঠেলে পাঠানো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আটক না করার কারণ জানতে চাইলে বড়লেখা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান মোল্লা শুক্রবার বিকেলে বলেন, আমি অফিসিয়ালি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।
এ বিষয়ে অভিজ্ঞ এক আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী বলেন, স্থানীয় লোকজন যখন ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের আটক করে পুলিশকে অবহিত করে, তখন পুলিশের দায়িত্ব ছিল তাদের গ্রেপ্তার করা অথবা বিষয়টি বিজিবিকে জানানো। কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়াই ডিউটি অফিসার দুলাল স্থানীয়দের ওই ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন না। অনুপ্রবেশকারীরা আদৌ বাংলাদেশি কি-না, অথবা তারা কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে দেশে প্রবেশ করেছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তা না করে ডিউটি অফিসার দুলাল দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা দেখিয়েছেন, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।