নিজস্ব প্রতিবেদক:: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মহদিকোনা গ্রামে মাদক নির্মূলে গঠিত মহদিকোনা সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, মাদকসেবনের সময় এক মাদকসেবীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করায় মাদকসেবীর স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় কমিটির ৮-৯ জন সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও ওই কমিটির সদস্য সুমন আহমদের অবস্থা গুরুতর। তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত সোমবার (০৩ মার্চ) রাতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় পরদিন মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) থানায় মামলা হলেও মূল আসামিদের এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। এতে কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের ধরতে তারা অভিযান চালাচ্ছেন।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা সদর ইউনিয়নের মহদিকোনা গ্রামে মাদকসেবীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। মাদকের টাকার জন্য অনেকে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা যা আয়রুজি করে সব নেশা করে উড়িয়ে দেয়। তাদের স্ত্রী-সন্তানদের মারপিট করে এবং সন্তানদেরকে পড়াশোনা করায় না। এতে এলাকার সচেতন যুবসমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা মাদক নির্মূলে এলাকার বিভিন্ন-শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে মহদিকোনা সমাজ কল্যাণ পরিষদ নামে একটি সামাজিক সংগঠন তৈরি করেন। কমিটি গঠনের পর তারা মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে এলাকার মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে থাকেন। এ পর্যন্ত তারা মাদক কেনাবেচা ও সেবনে জড়িত ২৫-৩০ জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। কিন্তু তারা জেল থেকে বেরিয়ে ফের মাদক কেনাবেচা ও সেবনের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। কয়েকমাস আগে কমিটির সদস্যরা মাদক সেবনের সময় হাতেনাতে ধরে জাসেল আহমদ নামে এলাকার এক যুবককে আইনের হাতে তুলে দেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত জাসেলকে ৩ মাসের সাজা প্রদান করেন। এই ঘটনায় জাসেল ও তার স্বজনরা কমিটির সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি জাসেল জেল থেকে জামিনে বের হয়। এরপর মহদিকোনা সমাজকল্যাণ পরিষদের সদস্যদের সাথে জাসেলের ঝগড়া হয়। ঝগড়াকে কেন্দ্র করে গত সোমবার (০৩ মার্চ) রাতে জাসেল ও তার স্বজনদের সাথে মহদিকোনা সমাজকল্যাণ পরিষদের সদস্যদের সাথে স্থানীয় বাজারে মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের ১০-১২ জন আহত হন। মারামােিত আহত কমিটির সদস্য সুমন আহমদ অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় পরদিন মঙ্গলবার মহদিকোনা সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শিব্বির আহমদ হামলার অভিযোগে মহদিকোনা গ্রামের সেবুল, লালু মিয়া, দুলাল মিয়া, খুশি মিয়া ও জাসেল আহমদসহ ২০ জনের নামোল্লেখ ও আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
হামলায় আহত মহদিকোনা সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শিব্বির আহমদ বলেন, এক মাদকসেবীকে আইনের হাতে সোপর্দ করায় সে ও তার স্বজনরা মিলে তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তারা বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তার মাথায় গুরুতরভাবে আঘাত লেগেছে। কমিটির এক সদ্যদের অবস্থাও গুরুতর। তারা মামলা করলেও পুলিশ এখনও মূল আসামিদের ধরতে পারেনি। এতে তারা হতাশ।
এদিকে অভিযুক্ত জাসেলে সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। যার কারণে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
বড়লেখা থানার ওসি আবুল কাশেম সরকার বলেন, মহদিকোনা গ্রামের একটি সংগঠনের সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগে তারা থানায় মামলা করেছেন। মামলাটি একজন এসআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাসুদ পারভেজ শনিবার বিকেলে বলেন, মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন। মূল আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।