রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম : বড়লেখায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ, প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা
ইউইআরডি’র নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

ইউইআরডি’র নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ



বিজ্ঞাপন

এ.জে লাভলু :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম (উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম) এর শিক্ষকরা চারমাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এতে তারা মানবেতর দিনযাপন করছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ভাড়া না পাওয়ায় ঘরের মালিকরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে শিশুদের ঝরেপড়া রোধে সরকারের নেওয়া এই উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

এব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা সম্প্রতি প্রোগ্রাম বাস্তবায়নকারী এনজিও সংস্থা ইউইআরডি’র নির্বাহী পরিচালক রবীন্দ্র চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ইউইআরডি’র নির্বাহী পরিচালক রবীন্দ্র চন্দ্র রায় তাদের বেতন-ভাতা, প্রতিষ্ঠানের ভাড়া, পরিবহন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ এবং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অর্থ না দিয়ে আত্মসাত করেছেন। যার কারণে তারা তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তবে প্রোগ্রাম বাস্তবায়নকারী এনজিও সংস্থা ইউইআরডি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।

জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষামুখী করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় বড়লেখা উপজেলায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রাম (উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম) চালু করা হয়। ইউইআরডি (ইউনাইটেড এফর্টস ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট) নামে একটি এনজিও সংস্থার মাধ্যমে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে উপজেলায় ৭০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। পাঠদানের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।

শিক্ষক শামীমা আক্তার, রানু বেগম, মিতালী দেবী, লিপি বোনার্জী, অনুপা বোনার্জী, জবা চাষা, মরাজানা বেগম, ছকিনা বেগম, হাছনা বেগম, সীমা বেগম, মিলি রানী বিশ্বাস, প্রিয়া রানী বিশ্বাস, শাহীনা বেগম ও কুলছুমা বেগম প্রমুখের অভিযোগ, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রোগ্রাম বাস্তবায়নকারী এনজিও সংস্থা ইউইআরডি’র নির্বাহী পরিচালক রবীন্দ্র চন্দ্র রায় তাদের নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন। সশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময় তাদের বেতন-ভাতা (৫ হাজার) আটকে রাখেন। কখনও মাসিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করলেও তা থেকে মাসে ৩০০ টাকা কর্তন করে রাখতেন। এব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। পরে দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিনের মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পেয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। এদিকে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার টাকা পাচ্ছেন না। এতে তারা চরম কষ্টে রয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ভাড়া না পাওয়ায় ঘর মালিকরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০ দিনের বেতন বাবদ ১ হাজার ৬৬ টাকা হারে ৭০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৬২০ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের ভাড়া ববাদ ৬০০ টাকা হারে ৪২ হাজার টাকা, ২০২২ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত অভিভাবক সভার জন্য ৭০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪ হাজার টাকা হারে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিছন্নতার বিল বাবদ ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৪ হাজার টাকা, শিক্ষক সমন্বয় সভার ১১ মাসের বিল ববাদ ২০০ টাকা হারে ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, পরিবহন ব্যয় বাবদ ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসিক ৫০০ টাকা হারে ৩৫ হাজার টাকা টাকা এবং উপবৃত্তির ১শ’ শতাংশের মধ্যে ৭০ শতাংশ এবং চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০টি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ ৫ হাজার টাকা হারে ৩ মাসের ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং ঘর ভাড়া বাবদ ১২০০ টাকা হারে ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা শিক্ষকরা পাননি, যা সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তারা আত্মসাত করেছেন।

দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের বেতন ও প্রতিষ্ঠান ভাড়া দিচ্ছে না। যার কারণে আমার ইউনিয়নে কয়েকটি ঘরের মালিক ভাড়া না পেয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছেন।

প্রোগ্রাম বাস্তবায়নকারী এনজিও সংস্থা ইউইআরডি’র নির্বাহী পরিচালক রবীন্দ্র চন্দ্র রায় তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার বলেন, কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিমাসে সকল শিক্ষকের বেতন-ভাতা এবং প্রতিষ্ঠানের ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখন প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হয়েছে। যার কারণে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। চলতি মাসে আবার সরকারের চুক্তি হতে পারে। তখন সরকার থেকে বেতন দিলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, তিনি এখনও কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।