বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

সিলেটে সেই অস্ত্রধারী তুহিন গ্রেফতার হয়েছেন ১৫ বার, মামলা ১৮টি



বিজ্ঞাপন

লাতু ডেস্ক:: আবুল কালাম আজাদ তুহিন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। বর্তমানে সেচ্ছাসেবক লীগ করেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আফতাব হোসেন খানের ‘খাস’ অনুসারী। অতি সম্প্রতি আফতাবের পক্ষে প্রতিপক্ষের বাসার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে হুমকি দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন তুহিন।

বর্তমানে ‘আত্মগোপনে’ ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ তুহিন। পুলিশ বলছে- ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’ তাকে।

জানা যায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ গত শুক্রবার সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়া শুক্রবার দিবাগত রাতে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন তিনি।

সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার সকালে বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে ১০-১২টি মোটরসাইকেলে ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাঁর বাসার ফটকের সামনে যান। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক তাক করে তাঁকে (আবদুল্লাহ) ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন। পাশাপাশি নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে আব্দুল্লাহ’র ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

এদিকে, এই অস্ত্র মহড়ার ভিডিও ক্লিপ গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে শনিবার ভোররাতে মহানগরের বনকলাপাড়া ও হাজীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বনকলাপাড়া এলাকার আতিকুর রহমান (৪২), জুবের আহমদ (৩৮) ও হাজীপাড়া এলাকার নুরুজ্জামান (৩৪)। গ্রেফতারকৃত তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, সেই অস্ত্রমহড়ার ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল হয় গত বৃহস্পতিবার। ফুটেজে দেখা যায়, বহরের একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন কাউন্সিলর আফতাব। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে সিলেটজুড়ে। একসময় পরিচয় শনাক্ত হয় আফতাবের অনুসারী সেই অস্ত্রধারীর। তার নাম আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিন। তিনি মহানগরের লন্ডনি রোডে দির্ঘদিন ধরে পরিবারের সাথে বসবাস করে আসছেন। তার স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালীর সেনবাগে। বাবার নাম নুরে আলম। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তুুহিনের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা চলমান। সবশেষ ২০২১ সালে অস্ত্রসহ তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন র‍্যাবের হাতে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অস্ত্রধারী তুহিন এলাকায় ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মাদক, অস্ত্র, ছিনতাই , সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও প্রতারণার অভিযোগে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বার।

জানা যায়, ২০১১ সালে তুহিন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনীত হন। তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদারের গ্রুপ করতেন তিনি। এরপরের দুই কমিটিতে তিনি আর স্থান পাননি। পদ হারানোর পর থেকেই সিসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের অনুসারী হন তুহিন।

আফতাবের অনুসারী অবস্থায়ই ২০২১ সালের ১২ মার্চ রাতে মহানগরের লন্ডনি রোড থেকে ১ বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, একটি পাইপগানের ব্যারেল , একটি অস্ত্রের বাট ও একটি রামধাসহ গ্রেফতার হন র‍্যাবের হাতে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বলছে- ভিডিও ফুটেজে যে অস্ত্রধারীকে দেখা গেছে তার নাম আবুল কালাম আজাদ তুহিন। তিনি ভয়ঙ্কর রকমের সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে এয়ারপোর্ট থানায় । বেশ কয়েকবার তাকে গ্রেফতার করে জেলাহাজতে পাঠানো হয়েছে। সবশেষ কয়েক মাস আগে অস্ত্রমামলায় কারাগারে ছিলেন তুহিন। জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়েই ফের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করেন।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার কাউন্সিলর আফতাবের পক্ষ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ’র বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে হানা দেন। কিন্তু পুলিশ তাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি জব্দ করতে পারেনি সেই আগ্নেয়াস্ত্রও।

তবে মূল অভিযুক্তদের ধরতে এবং অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও ফের প্রার্থী হওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আফতাব হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক রয়েছেন বেশ সরব। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত পোস্টও করে যাচ্ছেন তিনি।

সিলেট মেট্রোপলিপটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস রবিবার (১১ জুন) বিকালে বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবও তুহিনকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে বলে রবিবার রাতে জানিয়েছেন র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি আফসান আল আলম।