বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

বড়লেখায় কিশোরীকে ‘ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিল’ পুলিশ, তোলপাড়



বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক:: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীর (১৭) মামলা না নিয়ে রীতিমতো তার সঙ্গে তামাশা করেছে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ রহস্যজনক কারণে ধর্ষণে জড়িত যুবকের বিরুদ্ধে আইনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ঘটনাটি নিষ্পত্তির নামে পুলিশ ফাঁড়িতে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সালিশে ওই কিশোরীর মায়ের বাধা উপেক্ষা করে তাকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে অভিযুক্ত যুবক ওই কিশোরীকে তার বাড়িতে থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। পরে ওই কিশোরী ডাক্তারি পরীক্ষার পর বড়লেখা থানায় মামলার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ সমাধানের কথা বলে সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে এনে সময় ক্ষেপণ করেছে।

শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক ও এএসআই তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে ওই কিশোরীর পরিবার।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে-এ ধরনের ঘটনার আপোষ-মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর এলাকায় তোলপাড় চলছে। স্থানীয়রা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত যুবকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা কিশোরীর সঙ্গে পুলিশের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে গত ২৯ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার কিশোরী মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

কিশোরীর অভিযোগ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীর প্রতিবেশী উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনের ছেলে জামিল আহমদ (২১) গত ৭ মে তাকে অপহরণ করে একাধিকবার ধর্ষণ করে। মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরী ও অপহরণকারী জামিলকে ১৪ মে উদ্ধার করেন শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই তাজুল ইসলাম। ওইদিন কিশোরীকে আদালতে উপস্থাপন না করে রাতে তদন্ত কেন্দ্রে সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করেন পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক ও এএসআই তাজুল ইসলাম। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউপি সদস্য মখসুদ আহমদ রানা ও নারী ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম। বৈঠকে মায়ের আপত্তি উপেক্ষা করে কিশোরীকে অপহরণকারী ও ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় পুলিশ। পরে ওই কিশোরীকে পুলিশ অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে পাঠায়। পুলিশের পক্ষপাতমূলক এমন আচরণের কারণে বিয়ের পরিবর্তে উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ১৫ মে ওই কিশোরী তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর ওই কিশোরী বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ডাক্তারী পরীক্ষার পর থানায় ধর্ষণ মামলার প্রস্তুতি নেন। খবর পেয়ে ঘটনাটি সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনেন এএসআই তাজুল ইসলাম। এরপর তিনি সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। এরমধ্যে ওই যুবক অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন। এ অবস্থায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে আদালতে মামলা করতে যান। সেখানে গিয়েও মুহুরির দ্বারা প্রতারিত হন। মুহুরি প্রভাবিত হয়ে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলার পরিবর্তনে যৌতুকের মামলা লিখে দেন। লেখাপড়া না জানা কিশোরী না বুঝে এতে স্বাক্ষর করেন। পুলিশ তদন্তে গেলে বিষয়টি তারা বুঝতে পারেন।

ভুক্তভোগী কিশোরীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ করেছে জামিল। ফাঁড়িতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। তাজুল স্যার উদ্ধার করে মেয়েকে আমার কাছে না দিয়ে আইসি রবিউল স্যারকে নিয়ে বৈঠক বসান। আমার আপত্তি সত্তে্বও তাজুল স্যার ও রবিউল স্যার আমার মেয়েকে জামিলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য তার সাথে পাঠিয়ে দেন। এরপর একটা সাদা কাগজে তাজুল স্যার আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনা আপোষ হয়েছে, এ জন্য স্বাক্ষর দিতে হবে’।

আমি স্বাক্ষর না দেওয়ায় আমাকে ফাঁড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘তুমি কোনোদিন ফাঁড়িতে আসবা না, আমার সামনেও পড়বা না’। তখন অভিযোগের কপিটা চাইলে ওঠা না দিয়ে তাড়িয়ে দেন। কয়েকদিন পর আমার মেয়েকে জামিল ও তার পরিবার বিয়ে না করিয়ে নির্যাতন করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমি থানায় ধর্ষণ মামলা করতে গেলে খবর পেয়ে তাজুল স্যার আমাকে আপোষ করে দেবেন বলে মামলা না করতে বলেন। এরপর তাজুল স্যার আমাকে ঘুরাতে থাকেন। এই ফাঁকে জামিল বিয়ে করে ফেলে। কোর্টে মামলা করতে গেলে মরির ভুল মামলা লিখে দিয়েছে। মরির লিখে দিয়ে স্বাক্ষর দিতে বলায় মেয়ে স্বাক্ষর দিয়েছে। আমার মেয়েকে মৌলভীবাজারে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়েছি। আমার মেয়ে গর্ভবতী বলে জানিয়েছে ডাক্তার। এখন আমার মেয়েটির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। কোথাও গিয়ে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’

তদন্ত কেন্দ্রে ওই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মখসুদ আহমদ রানা ও নারী ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মখসুদ আহমদ রানা বলেন, ‘ঘটনাটি আমি জানতাম না। তদন্ত কেন্দ্র থেকে আমাকে ফোন দিয়ে নেওয়া হয়। এখানে (তদন্ত কেন্দ্রে) যা সিদ্ধান্ত হয়েছে পুলিশই নিয়েছে। আমরা কোনো কথা বলিনি। শুধু উপস্থিত ছিলাম।’

নারী ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, ‘পুলিশ উভয় পক্ষের সাথে কি কথা বলেছে ওঠা আমরা শুনিনি। তারা কথা বলেছে। আমি পাশের রুমে ছিলাম। আলোচনা শেষে শুধু জানানো হয়েছে মেয়ে-ছেলের বিয়ে হবে। বিয়ে যেদিন হওয়ার কথা ছিল সেদিন বিয়ে হয়নি। আমরা গিয়েছিলাম। শুনেছি আগের রাতে মেয়েকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাই মেয়েটি আমাদের উপস্থিতিতে কৌশলে পালিয়ে এসেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজারে কোর্টে আছি স্বাক্ষী দিতে। কিশোরীর ঘটনাটি আইসি স্যার সমাধান করে দিয়েছেন। উনার বক্তব্য নেন।’

শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি কখনো বসি নাই। সমাধানও করি নাই। বিষয়টা এএসআই তাজুল ভালো বলতে পারবেন।’