নিজস্ব প্রতিবেদক:: ফ্রান্সে মৌলভীবাজারের বড়লেখার কাওছার হামিদ আলীর (৩৫) মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক ইউপি সদস্য ফ্রান্স প্রবাসী সামাদ আহমদ তামিমকে ‘যড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো’হচ্ছে বলে তিনি দাবি করছেন । শনিবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এমনটাই দাবি করেন। একই সাথে তিনি গণমাধ্যমে তাকে জড়িয়ে প্রকাশিত সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, বড়লেখা উপজেলার পানিধার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে কাওছার হামিদ আলী ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ আলী ভাইয়ের মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি হত্যা ফ্রান্সের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ এখনও নিশ্চিত নয়। অথচ স্পেনে বসবাসরত সাংবাদিক নুরুল ওয়াহিদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদে আমার কোনো বক্তব্যও নেওয়া হয়নি। আমাকে যড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে না। এমন মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করায় আমি-আমার পরিবার সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি।
সেদিনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে আমি ফ্রান্সের আমার কর্মস্থল থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য মাজদরমি বাসস্টপে নাইট বাস ধরতে নামি। আমি বাস স্টপের সামনে আসা মাত্র দেখলাম কয়েকজন যুবক আমার পূর্ব পরিচিত আলী ভাইকে ঘিরে ধরে আছে। তার সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আলী ভাই তখন আমাকে ডাকলেন। আমি এগিয়ে গেলে আলী ভাই আমাকে বলেন, তারা আমার কাছে কিছু টাকা পাবে, আমি বলছি পরে দেব। তারা তো মানতেছে না। মেম্বার সাব তুমি একটু সময় নিয়া দেও রেবা। তখন আমি আলী ভাইয়ের পাওনাদারদের বলি কত পাবেন আলী ভাইয়ের কাছে, তারা জানায় ৩৮০ ইউরো। তাদের আমি বলি তাইন তো দিবা কইরা আপনারা একটু সময় দেন তানোরে। তারা আমার কথা মানতে নারাজ। যারা টাকা পাবে বলে দাবি করছিল তাদের একজন বড়লেখার কাঠালতলীর বাসিন্দা ও অন্যরা কুলাউড়া বাড়ি বলে জানিয়েছে। এর আগে তাদের আমি দেখিনি কোনো দিন। তখন আলী ভাই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তার হাতে মদের বোতল ছিল। আলী ভাই আমাকে বলেন, মেম্বার তুমি থাকলে দেও রেবা আমি পরে দিমু। আমি তখন বলি ভাই আমার কাছে এতো টাকা নেই। আচ্ছা দেশে আপনার কেউ থাকলে ফোন দেন। তারা যদি দায়িত্ব দেন আমি সময় নিয়ে তাদেরকে টাকা দেব। পরে আপনে আমারে পরিশোধ করে দিবেন । তখন আলী ভাই বলেন আমি মোবাইল তো বাসায় রাখিয়া আইছি। তোমার মোবাইল দেও। এরপর আলী ভাই আমার মোবাইল নিয়া তানোর বাড়িতে ফোন দিয়ে আমার কাছে ধরিয়ে দেন। ফোনটি তার বাবা ধরেন, আলী ভাই কথা বলেননি, তখন আলী ভাইয়ের বাবাকে আমার পরিচয় দিতে জানতে চাই আলী কে হয়, তিনি বলেন আমার ছেলে। আমি তখন ঘটনা খুলে বলি। জানাই যে চাচা আলী ভাইয়ের কাছে কয়েকজন লোক টাকা পাবে। আটকে রেখেছে, এখন কি করা যায়। তখন আলী ভাইয়ের বাবা বলেন সে আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি প্রায় আড়াই বছর হয়। এরপর আলী ভাইয়ের বাবা বলেন মেম্বার তুমি বিষয়টি সমাধান করে দেও। আমরা পরে দেখছি। এই বলে কথা শেষ করেন। তখন আলী ভাইয়ের পাওনাদাররা বিষয়টি মানছিল না। এমন সময় একটি পুলিশের গাড়ি আসে। আমারও বাস চলে আসে। আমি বাসে উঠে যাই। তখন আলী ভাইয়ের পাওনাদার যুবকদের চলে যেতে দেখি। আর কি ঘটেছে আমি জানিও না। ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশে অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে সব জায়গায় সিসি ক্যামেরাদ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসির ক্যামেরা দেখে ফ্রান্সের পুলিশ সত্য উদঘাটন করবে।
তিনি বলেন, গত ২০ অক্টোবর জানতে পারি আলী মারা গেছেন। অনেকের ফেসবুক থেকে জানতে পারি তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কিন্তু স্পেনে বসবাসরত সাংবাদিক নুরুল ওয়াহিদ আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বক্তব্য ও লাইভে বক্তব্য দেন। নুরুল ওয়াহিদ উল্লেখ করেন, আমি উবার আইডি ব্যবহারের টাকা ও ঘর ভাড়া পাব। অথচ ফ্রান্সে আমার নিজের কোনো ঘর নেই। আর উবার আইডিও নেই। নূরুল ওয়াহিদ ভাইয়ের বাড়ি ও আমার বাড়ি একই ইউনিয়নে। মূলত আমি দেশে থাকাকালীন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলাম, রাজনীতি করেছি। বর্তমানে ফ্রান্সেও রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্পেনে বসবাতরত নূরুল ওয়াহিদ ভাইয়ের সাথে ফেসবুকে আমার মতো বিরোধ হয়েছে। এসব আক্রোশে তিনি আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব মিথ্যা-মনগড়া তথ্য তুলে ধরছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর ফ্রান্সে একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৌলভীবাজারের বড়লেখার কাওছার হামিদ আলী (৩৫) মারা যান। তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। আলী বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ, আলীকে মারধর করে হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতেই ঘাতকরা দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে ফেসবুকে প্রচার করছে। ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ মুঠোফোনে বলেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সচিব শারহাদ শাকিল আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে ফ্রান্সের পুলিশ তাকে জানিয়েছে, কাওছার হামিদ আলী দুর্ঘটনায় মারা যায়নি; তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা আলীর নিজ এলাকা বড়লেখা ও কুলাউড়ার বলে তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছেন। তাদের নাম-পরিচয়ও তিনি জেনেছেন। ঘটনার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে নূরুল ওয়াহিদ বলেন, ঘটনার দিন তিনি (প্রত্যক্ষদর্শী) রাত দেড়টার পরে কাজ থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন তিনি দেখতে পান সামাদ কার সাথে ফোনে কথা বলছে। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে আলীর ওপর আঘাত করছে। তখন তিনি সামাদ ও আলীকে চিনতে পেরে ঘটনাটি মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। ঠিক তখন কুলাউড়ার একজন পেছন থেকে এসে আলীকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেয়। এরপর সবাই দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।