বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

কুলাউড়ায় পাহাড় ধসে ৩ শিশুর মৃত্যু, কাঁদছে ভাটেরা



বিজ্ঞাপন

লাতু ডেস্ক:: একসঙ্গে একই গ্রামের ৩টি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু। হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় ভাটেরা ইউনিয়নবাসী নির্বাক। নিহত ৩ শিশুর বাড়িতে স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। শোকে স্তব্ধ প্রতিবেশী পরায়ণ ইসলামনগর গ্রামও। নিজ উপজেলা ছাড়িয়ে জেলাজুড়ে মুখে মুখে মর্মান্তিক এই মৃত্যুর আলোচনা। মা-বাবা আর স্বজনরা তাদের স্মৃতিচারণ করে
আহাজারি আর শোকের মাতম করে মূর্চ্ছনা যাচ্ছেন। তাদের বিলাপে উপস্থিত সকলেরই চোখের পানি ঝরছে। সান্ত্বনার ভাষা নেই কারো।

দুর্ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যায় গ্রামটিতে পৌঁছালে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। তিন বাড়িতেই ছিল পাড়া-প্রতিবেশীর ভিড়। একই গ্রামের বাসিন্দা ইসলাম নগর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন আহমদ ও ভাটেরা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সমছ উদ্দিন জানালেন ৩ শিশুর অকাল মৃত্যুতে গ্রামবাসী শোকে বিহবল। এমন মর্মান্তিক ঘটনা তারা জীবদ্দশায় কখনো দেখননি। একসঙ্গে ৩ জনের লাশও বহন করেননি। কবর খোঁড়ার দায়িত্বে থাকা আছই মিয়া বলেন, আমার ৩৫ বছর কবর খোঁড়ার ইতিহাসে একসঙ্গে তিনটি কবর কখনো খুঁড়িনি।

যেভাবে ঘটে ওই দুর্ঘটনা: পরিবারের সদস্যরা জানান, দুপুরের খাবার খেয়ে খেলার ছলে তারা তিনজনই নিজ নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। যাওয়ার সময় তারা বলে যায় খেলতে যাচ্ছে। প্রতিদিনই তারা এভাবেই বিকালে দলবদ্ধ হয়ে খেলে। তাই এ নিয়ে তেমন বাড়তি দুশ্চিন্তা ছিল না অভিভাবকদের। তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকায় আর খেলার সাথীরা সবাই জড়ো না হওয়ায় তারা এই সুযোগে পাখির (মাছরাঙা) ছানা ধরতে বাসার খোঁজে ঘুরতে থাকে। ওই স্থানে একাধিক গর্ত থাকায় তারা ওখানেই পাখি ছানা ধরার প্রস্তুতি নেয়। এবং গর্তে ঢুকে তালাশ করতে থাকে। আগের রাতে ও ভোরে ওই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়। আর ছড়াঘেঁষা পাহাড়ি টিলার ওই স্থানটি ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। একপর্যায়ে তাদের উপর টিলার একটি অংশ ধসে পড়ে। আর ঘটনাস্থলেই তারা মাটি চাপায় আটকে যায়।

যেভাবে উদ্ধার হয় তিনজনের মৃতদেহ: পাহাড়ি টিলার মাটি ধসে যাওয়া স্থান থেকে তাদের লাশও উদ্ধার হওয়া অনেকটাই কঠিন ছিল। কারণ নির্জন ওই স্থানে তারা যে আটকা পড়েছে এই খবরও জানার সুযোগ ছিল না কারো। দুর্ঘটনার পর নিহত নুরুল আমিন সুমনের ভাই রুহুল ইসলাম আরও কয়েকজনের সঙ্গে জ্বালানি কাঠ নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। একপর্যায়ে তারা নতুন পাহাড়ি টিলায় ধস দেখে ঘটনাস্থলে আসে। তখন হঠাৎ তারা একটি হাতের অংশ দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করতে থাকে। তাদের এমন চিৎকারে নারী পুরুষসহ গ্রামবাসী অনেকেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং মাটি খুঁড়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া কামাল উদ্দিন ও বদরুল ইসলাম জানান, প্রথম দিকে মো. আব্দুল কবির (৯), নাহিদ ইসলাম (১২) এর নিথর দেহ উদ্ধার করার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে সন্দেহ হওয়ায় পরে ওখান থেকেই নরুল আমিন সুমনের (১৩) নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

৩ জনই ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী: মো. তছিবুর রহমান ও রায়না বেগম দম্পতির ছেলে নরুল আমিন সুমন। ৫ বোন ও ৪ ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। সে ভাটেরা সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণিতে পড়তো। মো. আব্দুল করিম ও রাবেয়া বেগম দম্পতির পুত্র মো. আব্দুল কবির। ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে কবির ছিল দ্বিতীয়। সে ভাটেরা বদরুল নরুল ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণিতে পড়তো। মো. আব্দুস ছালাম ও মনোয়রা বেগম দম্পতির পুত্র নাহিদ ইসলাম (১২)। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। সে ভাটেরা সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। তিনজনের পরিবারই হতদরিদ্র।

পাশাপাশি কবরেই শায়িত হলো তারা: শনিবার দিবাগত রাত ১১টায় ভাটেরা শাহী ঈদগা ময়দানে জানাযার নামাজ শেষে নিকটস্থ গোরস্থানে পাশাপাশি কবরে তাদেরকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও জানাযার নামাজে উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সন্তানহারা ৩টি পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নগদ ৫ হাজার ও তাদের তরফে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলো পর্যায়ক্রমে পরিবারগুলোকে দেয়া হবে।