বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



তাদের ‘স্যরি’ হয়ে যায় ইতিহাস



বিজ্ঞাপন

নিউজ ডেস্ক:: ব্যক্তি বড় হয়ে গেলে তখন আর মাছ ঢাকার মতো শাক পাওয়া যায় না। সভ্য দেশের বড় নেতাদের ‘লীলাখেলা’ তাই দোষের পর্যায়েই পড়ে। তথাপি সময়মতো অবনতমস্তকে স্যরি বলে ক্ষমাপ্রার্থনার নজির সৃষ্টি করেন তারা। জাতি ক্ষমা করলো কি না সেটার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দেয়—‘তারা স্যরি বলেছেন।’

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাম্প্রতিক দুঃখপ্রকাশের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এমন কিছু ঐতিহাসিক ‘স্যরি’র গল্প জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

দুঃখপ্রকাশে হলো দেরি

সভ্যদের দেশে এ ঘটনা রীতিমতো অসভ্যতার সামিল। করোনা তখন ফুলেফেঁপে উঠছে ব্রিটেনেও। দেশবাসীকে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। অথচ ঠিক ওই সময়ই (২০২০ সালের মে) তিনি নিজে আয়োজন করলেন মদ্যপানের পার্টি! যা নিয়ে পরে প্রশ্নের মুখে পড়লে আমতা আমতা করে অস্বীকারও করেন বরিস জনসন। কিন্তু ডিজিটাল ফুটফ্রিন্টের এ যুগে এতবড় পার্টির ছাপ কি লুকানো যায়? সম্প্রতি ওই পার্টি নিয়ে বরিসের পদত্যাগের দাবি উঠলে তিনি বিধ্বস্ত মুখে স্যরি বলেছেন জাতির সামনে। এহেন ক্ষমাপ্রার্থনার পর নীতিনির্ধারকদের দরদের পাত্রটা উথলে উঠবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।

থেরেসার এক্সিট-স্যরি

বরিসের ঠিক আগের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কেও সবার সামনে স্যরি বলতে হয়েছিল। ব্যক্তিগত কারণে নয়, ব্রেক্সিট চূড়ান্ত করতে বারবার দেরি হচ্ছিল বলে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। নিজের এমপি’দের অনীহার কারণে পরপর তিনবারের চেষ্টাতেও যখন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হলো না তখন পদত্যাগ করেন তিনি। থেরেসা মের দুঃখপ্রকাশ নিয়েও ব্যঙ্গ কম হয়নি। অনেকে তখন বলেছিলেন, দুঃখপ্রকাশ করতে গিয়ে থেরেসা নাকি একবার নকল কাশিও দিয়েছিলেন।

ট্রুডোকে ছাড়লো না অতীত

নেচেগেয়ে রীতিমতো ননীতে গড়া প্রধানমন্ত্রী বনে গিয়েছিলেন কানাডার জাস্টিন ট্রুডো। বাধ সাধলো সুদূর অতীত। সেই ২০০১ সালে শখের বশে আলাদিন সেজেছিলেন। আর তাতেই হই হই করে উঠলো সমালোচকরা। ওই ছবিতে ট্রুডোকে দেখা গিয়েছিল মুখে বাদামি রঙ লাগাতে। সরাসরি বর্ণবাদের অভিযোগ উঠলো। ২০১৯ সালে বিষয়টা চাউর হতেই বিধ্বস্ত চেহারায় ট্রুডোকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলতে শোনা গেলো, ‘আমি জানি অনেক কানাডিয়ান আছেন… অনেক অনেক কানাডিয়ান আছেন, যারা আমার কাজে মারাত্মক আহত হয়েছেন।’ এরপর সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ট্রুডো বলেছিলেন, ‘ব্যক্তি হিসেবে আমি যে ভবিষ্যতে অসহিষ্ণুতা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো, সেটা প্রমাণ করতে আমার কঠোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

দুর্নীতির সাত পাকে পার্ক গিউন হাই

স্ক্যান্ডালের জালে ডুবে প্যারালাইজড হয়ে পড়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া পার্ক গিউন হাইয়ের সরকার। সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। জেলেও যেতে হয়েছিল তাকে। ক্ষমতার অপব্যবহারের দায় মাথায় নিয়ে পর পর তিনবার টেলিভিশনে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল পার্ক গিউনকে। বারবার বলেছিলেন, ‘যা ঘটেছে, সব আমার ভুলে। সবই আমার অবহেলা।’

ক্লিনটনের মহাভুল

রাজনৈতিক ক্ষমা চাওয়ার ইতিহাসে ক্লিনটনের চেয়ে ভাইরাল বোধহয় আর কেউ হতে পারেননি। টানা কয়েক মাস অস্বীকার করার পর শেষে ১৯৯৮ সালের আগস্টে তিনি বলেই দেন যে, হোয়াইট হাউজ ইন্টার্ন মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে তার ‘অযথাযথ’ একটা সম্পর্ক ছিল। তার ভাষ্যে, ‘আমি লোকজনকে ভুল বুঝিয়েছি, এমনকি আমার স্ত্রীকেও। এর জন্য অন্তঃস্থল থেকে আমি দুঃখিত।’

ছোট ভুলে বড় স্যরি ম্যার্কেলের

ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির হাল ধরে রাখা অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলও ভুল করেন, স্যরিও বলেন। গত বছরের মার্চে একখানা ‘ছোট’ ভুলের জন্য বড় করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি। এ দুঃখপ্রকাশের বিষয়টা অবশ্য কেউ সেভাবে ধরিয়ে দেয়নি। তথাপি, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাননি। কী ছিল ম্যার্কেলের ভুল? ইস্টার হলিডের সময় লকডাউনের পরিসর বাড়ানো নিয়ে উঠেছিল বিতর্ক। ম্যার্কেল স্বীকার করেছেন প্রয়োজন ছাড়াই তিনি এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে বচসা করেছেন ও ইস্টার ব্রেকের সময়সীমা কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তার ভুল ছিল।

টাইগার উডসের মহা স্বীকারোক্তি

১৩ বছর আগের কথা। তারকা গলফার টাইগার উডস তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করে ওই সময় মিডিয়ায় তুলেছিলেন ঝড়। ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, ‘আমি আমার পরিবারকে ছোট করলাম। সেই সব ভুলগুলোর জন্য হৃদয়ের মণিকোঠা থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি আমার মূল্যবোধের প্রতি সৎ ছিলাম না। পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করেছি, সেটাও তাদের প্রাপ্য ছিল না।’ টাইগার উডসের সেই ‘স্যরি’ বেশ ভালোভাবেই নিয়েছিল ভক্ত ও স্পন্সররা।

এসব ‘স্যরি’কে নিউইয়র্ক টাইমস ঐতিহাসিক বললেও ভুরি ভুরি ব্যতিক্রম দেখা যাবে উপমহাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশের নেতা-মন্ত্রীদের মাঝে। সুতরাং— বিশেষ পদের জোর খাটিয়ে কাউকে অপহরণের হুমকি বা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের ফোনালাপ ফাঁস হলে জাস্টিন ট্রুডো কিংবা বরিস জনসনরা কী করতেন এ চিন্তা কারও কারও মাথায় উঁকি দিতেই পারে।