রবিবার, ১১ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



ক‌রোনা, ওসির স্লোগান ও ক‌্যামেরা ট্রায়া‌ল



বিজ্ঞাপন

মুনজের আহমদ চৌধুরী :: ক‌রোনার কবলিত বাংলা‌দেশ। ‌দে‌শের মানুষ জীবনের ঝু‌ঁ‌কি নি‌য়ে এরকম দুঃসময় এর আ‌গে কখ‌নো পার করে‌ছেন কি না, আমার জানা নেই। একটা আই‌সিইউ বে‌ডের জন‌্য কী রক‌মের যে ভয়াবহ হাহাকার,তা শুধু ভুক্ত‌ভোগীরা জা‌নেন। পু‌রো সি‌লেট বিভ‌া‌গে আই‌সিইউ বেড আ‌ছে প্রায় ৭৯ টি। অথচ আশংক‌াজনক ক‌রোনা রোগী হাজারো। চা‌রি‌দি‌কে মৃত‌্যু,স্বজন‌ হারা‌নোর আ‌র্তি।
দেশ যখন ক‌রোনার ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত,সরকারী বা‌হিনী তখন ব‌্যস্ত মদ আর ম‌ক্ষিরানী‌দের আট‌কের না‌মে ক‌্যা‌মেরা ট্রা‌য়েলের দুর্ধষ অভিযা‌নে। ম‌দের কিছু বোতল,হ‌রি‌নের চামড়া আর কিছু অ‌ভি‌নেত্রী‌দের আটক করার আইওয়াশ চ‌ললেও এস‌বের পেছ‌নের মুল হোতারা থে‌কে যা‌চ্ছে অধরা।

পু‌লি‌শের ও‌সি আওয়ামী লী‌গের দলীয় সভায় গি‌য়ে শ্লোগান দি‌চ্ছেন। জয় বাংলা আমাদের মু‌ক্তিযু‌দ্ধের স্লোগান। কিন্তু দ‌লের কো‌টি নেতাকর্মী থাকার পরও দলীয় সভায় থানার ও‌সি কেন গি‌য়ে স্লোগান দিতে হ‌বে, এ প্রশ্ন তোলায় যুবলীগ ব‌্যা‌রিস্টার সুমন না‌মে এক যুবলীগ নেতা‌কে অব‌্যা‌হতি দি‌য়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগ এক‌টি প‌রিস্কার বার্তা দি‌য়ে‌ছে। বার্তা‌টি হল দলীয় সভা‌তেও পু‌লি‌শের ও‌সি গি‌য়েই স্লোগান দে‌বেন। সেটাই ঠিক।

আস‌লে এ সরকা‌রের আম‌লে জনগ‌ণের প্রশ্নগু‌লি বোবা জিজ্ঞাসা হ‌য়ে গে‌ছে‌।

এসব নি‌য়ে যা‌দের কথা বলার কথা, যা‌দের কথা উ‌চিত তারা নির্বাক। আর সাধারণ মানুষ কথা না বল‌লেও সব বুঝেন। তারা জা‌নেন, নৌকা, পাল্লা ল‌াঙ্গল বা ধা‌নের শীষ, সব শাপ‌দেরই একই বিষ।
দে‌শে আসল বি‌রোধী দ‌লের সীমাহীন রাজ‌নৈ‌তিক ব‌্যার্থতা আজ‌কের এ প‌রি‌স্থি‌তির জন‌্য বর্তমান সরকা‌রের পাশাপা‌শি সমানভা‌বে দায়ী। বাংলা‌দে‌শের ক‌রোনা,বিচা‌রের না‌মে ক‌্যা‌মেরা ট্রায়াল,ইস‌্যু দি‌য়ে ইস‌্যু হত‌্যার চল‌তি সংস্কৃ‌তির জায়গাগু‌লি প্রায়ই হতাশ ক‌রে।

দুই.
সমাজ বা নি‌জের জন্মভু‌মি নি‌য়ে হতাশার বাই‌রে খুব নি‌জের যে জীবন,তা নি‌য়ে আস‌লে অসন্তুষ্ট থাকার সু‌যোগ নেই। উপ‌রে আল্লাহ আর জ‌মি‌নে শুধুমাত্র নি‌জের ক্ষমতার উপর ভরসা ক‌রে বে‌ঁ‌চে থাকবার যে তৃ‌প্তি, তার ব‌্যা‌প্তি অসীম। সেই জীবনটাই সব‌চে‌য়ে স্বার্থক ও আন‌ন্দের;যেখা‌নে একটু ভালভা‌বে বে‌ঁ‌চে থাকবার জন‌্য অন‌্য আর একজন মানু‌ষের ইচ্ছা-অ‌নিচ্ছা,অন‌ুগ্রহ নয়‌তো বদান‌্যতার উপর নির্ভর কর‌তে হয় না।

অক্ষ‌রের আস‌লে সাধ‌্য নেই,সেই আত্বনির্ভর জীবনটা‌কে বা‌ক্যে ধরে রাখবার।

গন্ত‌ব্যে পৌ‌ঁছে যাওয়াটা জীবন নয়। গন্ত‌ব্যের প‌থে এ‌গি‌য়ে যাবার যে প্রতি‌দি‌নের লড়াই, সেই জীবন। সেই জীব‌নে হৃদ‌য়ে অনুভু‌তির নদী যার আস‌লে যতটা গভীর;তার ঠিক ততটাই দুঃখ।

রা‌ষ্ট‌্রীয়, সামা‌জিক বা প‌রিবার জীব‌নে বসবাস জ‌নিত যে আনন্দ-বেদনার ফর্দ, তার অ‌নেকটাই আস‌লে একজন ব‌্যা‌ক্তি মানু‌ষের জীবনে প্রায় নির্ধারিত। যা‌পিত এই নাগ‌রিক জীব‌নের সম‌য়ে তার খুব বেশি প‌রিবর্তনের ক্ষমতা বে‌শিরভাগ মানু‌ষের কা‌ছে নেই।

কিন্তু নি‌জের যে জীবনট‌া,সেখা‌নে আ‌ছে। ভা‌লোবাসা থাক‌লে দুঃখ থা‌কবেই। মানুষ মুলত বে‌ঁ‌চে থা‌কে আ‌রো একটু ভা‌লো ক‌রে বাচঁবার লড়াইটা প্রতি‌দিন চালি‌য়ে যাবার জন‌্য।
সেই লড়াই‌য়ের যাত্রাপ‌থে আন‌ন্দের, মিল‌নের বা প্রা‌প্তির যাত্রা‌বির‌তি‌তে প্রাপ্ত দুঃখ,হতাশা, বেদনা‌বোধ প্রত্যেকটা জীব‌নের থা‌কে। ভাগ‌্য ব‌লেও একটা ব‌্যাপার থা‌কে। তার বাই‌রে, যতট‌ুকু নিয়ন্ত্রণ করা যায় জীব‌নের; আ‌মি তার সবটুকু‌কে তৃপ্ত রাখবার জন‌্যই, বে‌ঁ‌চে থা‌কি।

হতাশা, বেদনার যাত্রা‌বির‌তির নাম আস‌লে জীবন হ‌তে পা‌রে না কখ‌নোই। আন‌ন্দ, তৃ‌প্তি আর গন্ত‌ব্যের যাত্রায় প‌থে পাওয়া দুঃখগু‌লি‌কে ওভার‌টেক করার জন‌্য যথেষ্ট প‌রিমান জায়গা ছে‌ড়ে দি‌তে আমার ভাল লা‌গে।

লেখক: সাংবাদিক, লন্ডন।