দেলোয়ার হোসাইন :: আমরা বলে থাকি- তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ কিংবা খুন। আমাদের দেশে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তো অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটে! তখন সেটা আর তুচ্ছ থাকে না। এই ‘তুচ্ছ ঘটনা’কেই আমরা তখন বড় করেই দেখি! আমাদের কাছে তুচ্ছটাই বড় হয়ে ওঠে!
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) পবিত্র মাহে রামাদ্বানের এক বিকেলে বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুরের চোয়ারকান্দি (চরগ্রাম, মোহনপুরের পরে এই চোয়ারকান্দি গ্রাম, এই গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামের নাম চোয়ারকান্দি বলেই দাবি করেছেন!) এমনই এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝরে গেল আব্দুল হাছিব (৫০) নামের এক বৃদ্ধের প্রাণ। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সরেজমিনে জানা যায়, বৃহস্পতিবার আসরের নামাজের পর নিহত আব্দুল হাছিব মেয়ে ফাতিমা বেগম তাঁর চাচি (আব্দুল হাছিবের চাচাতো ভাই আব্দুল জব্বারের স্ত্রী) রুবি বেগমের কাছে পাওনা চা পাতা (যা কর্জ নিয়েছিলেন রুবি বেগম) চাইতে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে রুবি বেগমকে ফাতিমা বেগম বলেন, আমার আব্বা বাজারে যাবেন না। ইফতারের পর আমাদের কামলাদের (ধান মাড়াইয়ের মেশিনের শ্রমিক) চা দিতে হবে- আমাদের পা পাতা দেন। তখন চাচি রুবি বেগম বলেন, কিসের চা পাতা? আমি তো তোমাদের চা পাতা দিয়ে দিয়েছি! জবাবে ফাতিমা বলেন, চা পাতা নিয়েছেন বড় চামচ দিয়ে আর দিয়েছেন ছোট চামচ দিয়ে। এখন ছোট চামচ দিয়ে নেন আর বড় চামচ দিয়ে দেন!
এই নিয়ে শুরু হয় তর্কাতর্কি। স্বজন-প্রতিবেশিরা জড়ো হন, ঝগড়া থামাতে চেষ্টা করেন। লাভ হয়নি। এরমাঝেই রুবি বেগমের ছেলে সাগর ইটের টুকরো ফাতেমার দিকে ছুঁড়ে মারেন। সেটা ফাতেমার গায়ে লাগেনি। ফাতেমা উল্টো ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারলে সেটা রুবি বেগমের শরীরে আঘাত আঘাত করে।
এ সময় রুবি বেগমে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রুবি বেগমের মা (স্বামীর বাড়ির পাশেই রুবি বেগমের বাপের বাড়ি) মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মেরে ফেললো ফেললো বলে আহাজারি করতে থাকেন। শুরু হয় তুমুল ইট-পাটকেল ছুড়াছুড়ি। রুবি বেগমের স্বামী, ছেলে, দেবর, ভাই, বাবাসহ বাড়ির অনেকেই ইট-পাটকেল ছুড়াছুড়িতে জড়িয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: বড়লেখার শাহবাজপুরে বৃদ্ধ খুন
এদিকে বাড়ির পাশেই ধান মাড়াইয়ের কাজ করছিলেন আব্দুল হাছিব। ঝগড়া শোনে হাতে একটি কাঠের টুকরো নিয়ে বাড়ির দিকে আসতে চাইছিলেন। সেখান থেকে তাঁর স্ত্রী হাত থেকে কাঠের টুকরো কেড়ে নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু ঝগড়া থামেনি তাই তিনি আবার বাড়ির দিকে আসেন। ইট-পাটকেল ছুড়াছুড়িতে রুবি বেগমের ভাই আব্দুল হাছিবের মেয়েকে আঘাত করেন। আব্দুল হাছিব পাল্টা আঘাত করলে, রুবি বেগমের বাবা আব্দুল হাছিবকে কাঠের টুকরো দিয়ে (বর্গা) আঘাতের চেষ্টা করেন। সে আঘাত আব্দুল হাছিবের আরেক চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজ হাত দিয়ে প্রতিহত করেন। তবে এ সময় রুবি বেগমের স্বামী আব্দুল জব্বার কাঠের টুকরো দিয়ে (বর্গা) সজোরে আব্দুল হাছিবের মাথার পাশে আঘাত করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ের তিনি। এতে আব্দুল হাছিবের নাক-মুখ-কান দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা হাছিবকে প্রথমে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেটে প্রেরণ করেন। পরদিন শুক্রবার দুপুরে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে মারামারির পর দিব্যি ঘুরছিলেন আব্দুল জব্বার। মারামারি পর নিজে পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েও ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার আব্দুল হাছিবের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর পরিবার নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে।
এই হলো- ‘তুচ্ছ ঘটনা’র বড় শিরোনাম! আমা’দে’র তুচ্ছ তুচ্ছ অভিজ্ঞতা…
সম্পাদক, লাতু এক্সপ্রেস