দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের এখন রয়েছে ব্যাপক অবদান। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের এগিয়ে আসায় তৈরি হয়েছে নতুন নতুন অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্প। পারিবারিক অর্থনীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে।
কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ফলে পারিবারিক অর্থনৈতিক বাধা অতিক্রম করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে গেটকিপার হিসেবে কর্মরত ফাতেমা আক্তার। ডিগ্রি পাস করে ফাতেমা কাজ করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের গেটকিপার হিসেবে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সোনাপুর রেলগেটে দেড় বছর ধরে গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
ফাতেমার বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়। ২০ বছর আগে বিয়ে হয় ফাতেমা বেগমের। অভাব অনটনের সংসারে কোনো রকম দিনযাপন করছিলেন। অভাবটাই যেন সংসারের সুখে হানা দিয়েছিল। চাকরির সন্ধানে অনেক চেষ্টার পর যোগ দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের গেটকিপার হিসেবে। প্রথমদিকে চাকরি হওয়ার পর আত্মীয়-স্বজনের বাধার সম্মুখীন হন ফাতেমা। কেউ সেই চাকরিতে যোগদানের জন্য উৎসাহ দেয়নি বরং অনেকেই বাধা দিয়েছিলেন। সব বাধাকে উপেক্ষা করে ফাতেমা মনোবল দৃঢ় রেখে যোগদান করেন রেলওয়ের চাকরিতে।
একজন নারী হিসেবে গেটকিপারের চাকরি করা একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ফাতেমা বলেন, একজন নারী হিসেবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রেনের গেটম্যানের কাজ করব বিষয়টা আমার কাছে একদম খারাপ লেগেছিল। লোকে কী বলবে। তাছাড়া নিজের আত্মসম্মানবোধ, আত্মীয়-স্বজনের অনেক বাধা উপেক্ষা করে আমাকে এখানে আসতে হয়েছে।
স্বামীর সামান্য আয় দিয়ে ফাতেমা বেগমের পরিবারের ভরণপোষণ নিতান্ত কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া ফাতেমা বেগম একজন শিক্ষিত নারী। পরিবারের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। সেই থেকে তিনি চাকরির সন্ধান করতে থাকেন। পরে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগদান করেন ফাতেমা বেগম।
ফাতেমা বেগমের স্বামী আর এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার। মেয়ে খাদিজা বেগম লেখাপড়া করে নবম শ্রেণিতে। ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে। স্বামীর পাশাপাশি এখন ফাতেমা বেগম নিজেও অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি এখন স্বাচ্ছন্দ্যে নিজের সংসার চালাচ্ছেন। ফাতেমার এগিয়ে আসার ফলে পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। নারী হিসেবে ফাতেমা বেগমের প্রবল আগ্রহ আর সাহস তার পারিবারিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।
ফাতেমা বেগম আরও জানান, নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করলে পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে। এজন্য প্রয়োজন নারীদের কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ এবং সুযোগ তৈরি করা।