রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

বাহুবলে র‌্যাবের খাঁচায় পেশাদার সাইবার অপরাধী, টার্গেট নারীরা
নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক



বিজ্ঞাপন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, দেশজুড়ে পরিচিত সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী এবং গৃহিণী কারও ফেসবুক আইডি হ্যাক করার বাকি নেই। গড়ে তুলেছেন ফেসবুক আইডি হ্যাক করার বিশাল সাম্রাজ্য। অনেককেই ব্ল্যাকমেইল করে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অশ্লীল ছবি বা ভিডিও তৈরি করে পাঠিয়ে কারও ভেঙেছেন সংসার। কখনও আবার র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মানুষকে হুমকি দিয়েছেন, টাকা-পয়সা নিয়েছেন। তাদের মূল টার্গেটে ফেসবুক ব্যবহারকারী নারীরা।


ভয়ংকর এ সাইবার অপরাধী চক্রের সব তথ্য ইতোমধ্যে সংগ্রহ করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তাদের ভয়ঙ্কর অপরাধের সব চিত্র। গ্রেফতার করা হয়েছে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার তিতারকোণা মামদনগর গ্রামের বাসিন্দা মৃত ইজাজুর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান নবীনকে (২৮)। তার বিরুদ্ধে র‌্যাব-৯ সিলেটের এসআই পঙ্কজ দাশ বাদী হয়ে সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করেছেন।

মামলার এজাহারে তার অপরাধের ১৩৯ পৃষ্টার স্ক্রিনশট জমা দেয়া হয়েছে। আর সাইবার অপরাধীদের তথ্যের ১ হাজার ২৬৫ পৃষ্টার স্ক্রিনশট সংগ্রহ করেছে র‌্যাব। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তাকে বাহুবল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগে বিকেলে তাকে আটক করে র‌্যাব-৯ সিলেট ক্যাম্পে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে র‌্যাব-৯ এর সিলেটের অপারেশন অফিসার শামীম আনোয়ার জানান, তার একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। সে সেলিব্রেটি থেকে গৃহিণী কারও ফেসবুক হ্যাক করার বাকি রাখেনি। ফেসবুক হ্যাক করে টাকা পয়সা চায়। বলে টাকা দিলে আইডি ফিরিয়ে দেব। অন্যথায় এটি ডিজেবল করে দেব।

তিনি বলেন, মেয়েদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পর সে ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করে তা এডিট করে ওই আইডির মালিকের কাছে পাঠিয়ে দিত। এরপর মেয়েদের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল আচরণ করতো। এ অপরাধী অসংখ্য মানুষের সংসার ভেঙেছে। দেখে বুঝার উপায় নেই সে এমন একজন অপরাধী। তার বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা আরও অনেক বেশি দক্ষ। সেগুলোর অনুসন্ধান চলছে। খুব দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।


এ বিষয়ে বুধবার রাতে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন র‌্যাব-৯ সিলেটের অপারেশন অফিসার শামীম আনোয়ার। সেখানে অপরাধী চক্রের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন তিনি। তার ফেসবুকে পোস্ট করা তথ্যের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো, ‘একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের উপস্থাপিকার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হওয়ার সূত্র ধরে রবিনের সাইবার অপরাধ সাম্রাজ্যের বিষয়টি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। ব্যক্তিগত প্রণোদনা থেকে একটু গভীরে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে যা আবিষ্কার করলাম, তা রীতিমতো চমকে ওঠার মতোই। ফেসবুক আইডি হ্যাক করে টুপাইস কামিয়ে নেয়ার মতো প্রথাগত সাইবার অপরাধী আর ঠুনকো কাজের কাজি নন তিনি মোটেও। তার কাজের বহুমাত্রিকতা সত্যিই একজনের মাথা খারাপ করে দেয়ার তরফে যথেষ্ট।

Md Anwar Ahmed, Md Kamruzzaman, RJ Rimon আইডিগুলো ভিন্ন ভিন্ন হলেও মানুষ কিন্তু একটাই। পেশায় র‌্যাব অফিসার (!)। র‌্যাবের ডিএডি পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে ঘিরেই তার অপরাধ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি। তার শিকারের আওতা থেকে বাদ যান না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, দেশজুড়ে পরিচিত সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী কিংবা আটপ্রৌরে জীবনযাপনকারী সাধারণ একজন চাকরজীবী বা গৃহিণীও। একের পর এক ব্যক্তিকে টার্গেট করে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করার মাধ্যমে অকল্পনীয় সব উপায়ে সাইবার অপরাধ সংঘটন করেন তিনি। হ্যাককৃত আইডি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন, সম্ভাব্য সকল উপায়ে তার সম্মান বিনষ্ট করেন।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হলো সবশেষে এ আইডিগুলোকে তিনি নিয়োজিত করেন বড় বড় সাইবার অপরাধ সংঘটনের কাজে! তার অপরাধ প্রক্রিয়ার বয়ান শুনলে নিশ্চিত শিউরে উঠবেন যে কোন সুস্থ, স্বাভাবিক, বিবেকবান মানুষ। টার্গেট করার ক্ষেত্রে নারীদের ফেসবুক আইডির প্রতিই তার বিশেষ নেক নজর। হ্যাক করার পর প্রথমে তিনি আইডির মালিককে মানসিক চাপ দেয়ার উদ্দেশ্যে আইডিতে থাকা একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন জনকে পাঠিয়ে দিতে থাকেন। আইডির মালিক ‘আপসে’ আসুন বা না আসুন, তিনি কখনোই ওই আইডি তার মালিককে ফেরত দেন না। বরং আইডির ছবি, ইনফোগুলো পরিবর্তন করে কোনো কোনোটাকে সাজিয়ে নেন র‌্যাব অফিসার, আবার কিছু আইডির পরিচয় রেখে দেন সাধারণ আমজনতা হিসেবেও। তারপর এ আইডিগুলো ব্যবহার করে শুরু হয় তার বিভিন্ন মুখী বিচিত্র ‘আসল’ খেলা।


একটা উদাহরণ দেই, বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে আমজনতা হিসেবে সাজানো একটা আইডি থেকে তিনি একটা হেল্প চেয়ে পোস্ট দেন। তারপর র‌্যাব অফিসার হিসেবে সাজানো আইডি থেকে সেখানে কমেন্ট করে অনুরোধ করেন ইনবক্স মেসেজে কথা বলতে। কারণ তিনি তো আবার র‌্যাবের অফিসার। প্রকাশ্যে কথা বলা বারণ! কয়েক দিন পর প্রথম আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয় যে, ওমুক র‌্যাব অফিসার (যে আইডি থেকে ইনবক্সে আসতে বলা হয়েছিল তার নাম উল্লেখ করে) তার জমি বা হারানো মোবাইলটি উদ্ধার করে দিয়েছে। এজন্য তাকে অনেক অনেক থ্যাংকস, কৃতজ্ঞতা এসবও জানায়!

যারা প্রকৃতই এ ধরনের সমস্যায় আছেন তারা ভাবেন আহারে, কী দরদি অফিসার! অবধারিতভাবে ওই র‌্যাব অফিসারের আইডিতে বিভিন্ন জন তাদের সমস্যার কথা বলতে থাকেন। তখনই (ভুয়া) র‌্যাব অফিসার সুযোগটা নেন। সহযোগিতা করার বিনিময়ে টাকা দাবি করেন। বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম টাকা না পাঠালে কাজ করা হবে না মর্মেও সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন। কারণ এ কাজ করতে গেলে র‌্যাবের প্রযুক্তি বিশারদের হেল্প প্রয়োজন। সেজন্য তাকে কিছু টাকা দিতে হবে। সাহায্যপ্রার্থীও কনভিন্সড। র‌্যাব অফিসার বলে কথা। একটু স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড তো তিনি হবেনই। বাস্তব জগতের র‌্যাবগুলা জানি কেমন! একটা টাকাও নিতে চায় না, কোনো হেল্পও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। আরে অফিসারতো হতে হবে এই ইনার মতো। দু’টাকা নেবে, দশ টাকার কাজ করে দেবে। অগ্রিম দেয়ার প্রস্তাবে কেউই আপত্তি করেন না। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে দিনের পর দিন পকেট ভারি করে চলেন তিনি।’