মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় জুলাইয়ের শেষ ১২ দিনে ৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত ২০ জুলাই শনিবার বিকেল চারটায় নিখোঁজের দুইদিন পর শিবুল মিয়া (২৫) নামে এক যুবকের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর এলাকায় বন্যার পানিতে একটি লাশ ভাসতে দেখেন পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পরে শিবুলের পরিবারের লোকজন লাশ সনাক্ত করেন। শিবুল উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের মৃত আহমদ আলীর পুত্র।
এদিকে শিপুল মিয়া হত্যাকারীদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ৬ গ্রামবাসীর উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২২ জুলাই সোমবার বিকেল ৩টায় স্থানীয় ভূয়াই বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপজেলার শাহাপুর, রাজাপুর, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর, মোহাম্মদপুর ও ভূয়াই গ্রামের শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধারস্থল পরিদর্শনে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে নৌকায় যাবার পথে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে শিপুলের মৃত্যু হতে পারে। কেননা পানির সামান্য উপরেই বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের তার ঝুলে আছে। তাছাড়া লাশের বুকে ও জামায় পোড়া দাগ ছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ২১ জুলাই রোববার রাত ১১টায় জলাশয়ে মাছ ধরতে গিয়ে সামাদ খা (১৭) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়েছেন আরো ২ জন। রোববার রাত ১১টায় উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে ঘটনা ঘটে। নিহত সামাদ খা উপজেলার য় হামিদপুর গ্রামের আনোয়ার খা’র পুত্র।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রোববার সন্ধ্যার পর হামিদপুর গ্রামের ৫/৬ জন লোক স্থানীয় উস্তার মাস্টারের বাড়ির নিকট জলাশয়ে মাছ ধরতে যায়। সেখানে পানিতে নেমে জাল পাতে। রাত সাড়ে ৯টায় পানিতে সৃষ্ট গ্যাস বা বিষক্রিয়ায় তিনজন আক্রান্ত হয়।
এ সময় হামিদপুর গ্রামের সিকন্দর আলীর পুত্র শাহীন আহমদ (১৯) ও রফিক মিয়ার পুত্র কাশেম মিয়া (৩৪) পারে উঠে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কিন্তু আনোয়ার খা’র পুত্র সামাদ খা (১৭) পানিতে ডুবে যায়। শাহীন কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলেও কাশেমকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
২৩ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর একটায় উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের মোকামটিলা গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শাওন দাস (২২) নামে এক বিদ্যুৎ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। শাওন এর বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায়।
৩০ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ১১টায় উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামে নৌকা চালানো অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের খাগটেকা গ্রামের যথীন্দ্র কুমার দাসের (কুটুবালা) পুত্র রূপক দাস রুপাই (২৮) নামে এক নৌকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
এদিকে ৩১ জুলাই বুধবার গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে অর্জুন ভর (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা হয়। বুধবার সকাল ৭টায় উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাপনাপাহাড় চা বাগানের খাসকিতা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। নিহত অর্জুনের বাড়ি একই এলাকায়।
এ বিষয়ে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় অর্জুনের পিঠ ও বুকে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
৩১ জুলাই বুধবার ভাল্লুকের আক্রমণে আব্দুল খান (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পুটিছড়া বাঁশ মহাল থেকে লাশ তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে জুড়ী থানা পুলিশ। নিহত আব্দুল খান উপজেলার উত্তর বড় ডহর গ্রামের তৈয়ব খানের পুত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার পুটিছড়া বাঁশ মহালে কাঠ আনতে যান আব্দুল খান। কিন্তু রাতেও বাড়ি ফিরেননি তিনি। বিষয়টি জুড়ী থানা পুলিশকে অবহিত করেন পরিবারের লোকজন। পরে তাকে খোঁজতে গিয়ে রাতেই বনের মধ্যে তাঁর লাশ দেখতে পান। আজ সকালে পুলিশ আব্দুল খানের লাশ উদ্ধার করে জুড়ী থানায় নিয়ে আসে।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত করমকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, বনবিভাগের লোকজন আব্দুল খানের মৃত্যু কালো ভাল্লুকের আক্রমণে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। নিহতের ঠোঁট ও কান বন্যপ্রাণী খেয়ে ফেলেছে।