বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

জুড়ীতে আসুক পরিবারেই থাকল উপজেলা চেয়ারম্যান



বিজ্ঞাপন

মঞ্জুরে আলম লাল, জুড়ী:
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে আসুক পরিবারেই থাকল উপজেলা চেয়ারম্যান। এ পরিবারে পরপর তিন জন উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন। উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর নিবাসী সাবেক পোস্ট মাস্টার মরহুম এম এ মুছাওয়ীর-এর ছয় পুত্রের তিনজনই মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা হলেন- এমএ মুমীত আসুক, এমএ মোহাইমীন সালেহ ও এমএ মোঈদ ফারুক।

এমএ মুমিত আসুক ১৯৬৪ সালে মুজাহিদ বাহিনীতে যোগদেন। ৬৫র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশনেন। ৬৬র ৬ দফা ও ৬৯ এর গণআন্দোলনে জড়িত হন। এ সময় সামরিক আইন জারীর পর কারাবন্দি হন। কারা মুক্তির পর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন পূর্বক জুড়ী অঞ্চলের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ ইংরেজিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টরের রানীবাড়ি সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

১৯৯২ ইংরেজি থেকে ২০০৮ ইংরেজি পর্যন্ত একাধারে ১৭ বছর (তিন বারের নির্বাচিত) পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০০৪ ইংরেজিতে গঠিত জুড়ী উপজেলা পরিষদে ২০০৯ সালে প্রথম নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ২০১৪ ইংরেজিতে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এম এ মুমীত আসুক। আসুক পরিবার জুড়ীতে তৈয়বুন্নেছা খানম একাডেমি ডিগ্রি কলেজ, মুছাওয়ীর হাফিজিয়া মাদ্রাসা, মুছাওয়ীর দাখিল মাদ্রাসা ও এতিম খানা এবং মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

এছাড়া উপজেলায় অসংখ্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার ও শিক্ষার মান উন্নয়ন সেই সাথে ঝরে পড়া রোধ এমনকি গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর চিকিৎসায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। এমএ মুমীত আসুকের একান্ত প্রচেষ্টায় জুড়ীতে এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি পরীক্ষা কেন্দ্র ও জুড়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন হয়। ২০০৪ ইংরেজিতে জুড়ী উপজেলা গঠনে তাঁর ব্যাপক ভূমিকা ছিল। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় তিনি ২০১১ ইংরেজিতে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে জাতীয় পদক লাভ করেন।

 

জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুমীত আসুক ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর রাত সোয়া নয়টায় উপজেলার বাছিরপুরস্থ বাংলাবাড়ীতে ইন্তেকাল করেন।

এমএ মুমীত আসুকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে এম এ মুমীত আসুকের স্ত্রী, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গুলশান আরা মিলি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করে ঘোড়া প্রতীকে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার ভোট পেয়ে ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন।

গত ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে তৃতীয়বারের মতো জুড়ী উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন গুলশান আরা মিলি। কিন্তু পারিবারিক কলহে তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তাঁরই দেবর, এম এ মুমীত আসুকের ছোট ভাই ও হল্যান্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক। আসুক পরিবারের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ভাবিকে হারিয়ে আনারস প্রতীকে বিপুল ভোটে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর এ বিপুল বিজয়ে আসুক চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে সৃষ্ট শূন্যতা তাঁকে দিয়েই পুরণ হবে এমনটা জুড়ীবাসীর প্রত্যাশা।

এক প্রতিক্রিয়ায় এম এ মোঈদ ফারুক বলেন, জুড়ীর সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায়, অবহেলিত এলাকায় উন্নয়ন পৌঁছে দেয়া, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নসহ জুড়ী উপজেলাকে দুর্নীতিমুক্ত একটি সত্যিকারের মডেল উপজেলায় পরিণত করাই আমার লক্ষ্য।