রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

লাউয়াছড়ায় ট্রেন ও গাড়ি চাপায় হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী



বিজ্ঞাপন

রিপন দে :: নানা জাতের বিপন্ন এবং বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্রে ভরপুর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া। ১২শ ৫০ হেক্টর সংরক্ষিত বন নিয়ে ১৯৯৬ সালে একে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা সড়ক ও রেলপথের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে এর জীববৈচিত্র।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলার সংযোগ সড়কের সাড়ে ছয় কিলোমিটার এবং ঢাকা-সিলেট রেলপথের পাঁচ কিলোমিটার অংশ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বহমান। এ বনে ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচর, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও অসংখ্য কীটপতঙ্গ রয়েছে। বিরল প্রজাতির উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমানও দেখতে পাওয়া যায়।

বনের ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেন ও গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে অনেক বিরল বন্যপ্রাণী। ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের হিসাবমতে, শুধু সড়কপথে গাড়ির চাকায় চাপা পড়ে লাউয়াছড়ায় প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ৪৫টি বন্যপ্রাণী। আর রেলপথে মারা যাওয়া বন্যপ্রাণীর হিসাব নেই কারো কাছে। চলতি বছরের শুরুতে রেলের ধাক্কায় মারা যায় একটি মায়া হরিণ এবং সড়কপথে গাড়ির ধাক্কায় মারা যায় বিলুপ্ত প্রজাতির দুটি চিতা বিড়াল। বিভিন্ন সময় রেলের চাকায় কাটা পড়ে অজগরসহ অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণীও মারা যায়।

প্রাণী রক্ষায় জাতীয় উদ্যান থেকে সড়ক ও রেলপথ অপসারণের জন্য গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন পরিবেশবাদীসহ বিভিন্ন সংগঠন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে লাউয়াছড়ার ভেতর থেকে সড়ক ও রেলপথ সরানোর একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বনবিভাগ। এরপর ২০১৬ সালের ২ আগস্ট ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং রাতারগুল জলারবন’ সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় লাউয়াছড়া উদ্যানের প্রাণী রক্ষায় বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়ক সরিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বনের ভেতর থেকে কালাছড়া ও চাউতলি খাসিয়াপুঞ্জি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিকল্প সড়ক বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তবে রেললাইন স্থানান্তরে এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বন্যপ্রাণী সেবক ও গবেষক তানিয়া খান বলেন, ‘বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেল লাইন ও সড়কপথ সরিয়ে না নিতে পারলে প্রাণীদের জন্য আরও হুমকি নিয়ে আসবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বনের ভেতর থেকে সড়ক ও রেলপথ স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছি। পথগুলো স্থানান্তর করা না হলে কোনভাবেই বন্যপ্রাণী রক্ষা করা যাবে না।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সড়কপথ সরানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। সড়কটি সরানো হবে অথবা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তবে রেলপথ সরাতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হবে।’