রিপন দে :: দেশের ১৬২টি চা বাগানে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রধান শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন নারীরা। অন্যদিকে পুরুষ শ্রমিকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করেন কারখানায়। পুরুষের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় বেশি কাজ করেও নারীদের আয় পুরুষের সমান। দৈনিক আয় সর্বোচ্চ ১০২ টাকা। কিন্তু সে টাকাও নারীরা নিজের হাতে পান না। বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নারী শ্রমিকদের পক্ষে তাদের স্বামী বা পরিবারের পুরুষ প্রতিনিধিই মজুরির টাকা উত্তোলন করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী চা শ্রমিক। বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর উল্লেখযোগ্য বড় একটি অংশ মৌলভীবাজারে। এখানকার ৯২টি চা বাগানের মূল শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন নারীরা।
বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে নারী শ্রমিকরা জানান, প্রতিদিন তারা ৮ ঘণ্টা কাজ করেন। আর পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করেন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। অথচ উভয়ই সমান মজুরি পান।
চা বাগানের শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০ কেজির অধিক চা পাতা উত্তোলন করলে প্রতি কেজির বিপরীতে একজন শ্রমিককে ৫ টাকা করে বাড়তি দেয়ার কথা। তবে এক্ষেত্রে নারীদের কম দেয়া হয় বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। পুরুষ শ্রমিকরা পদোন্নতি পেয়ে ‘সর্দার’, ‘বাবু’ হলেও নারী শ্রমিকদের সাধারণ পদোন্নতি দেয়া হয় না বলেও জানান তারা। এছাড়া মাতৃত্বকালীন সময়েও বঞ্চনার শিকার হন চা বাগানের নারী শ্রমিকরা।
কমলগঞ্জের খুরমা চা বাগানের শ্রমিক গীতা রানী কানু বলেন, বাগানে নারীরা বেশি পরিশ্রম করেন অথচ মজুরি পান পুরুষের সমান। আবার অতিরিক্ত পাতা উত্তোলন করেও নির্ধারিত বোনাস পান না।
চা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন মিন্টু দেশোয়ারা। তিনি জানান, দেশের সব চা বাগানেই প্রধান শ্রমিক মূলত নারীরা। অপরদিকে পুরুষরা অনেক সময় কাজে ফাঁকি দিলেও নারীরা তা করেন না। সে হিসেবে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মজুরি বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুজনের মজুরিই সমান। তার ওপর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের মজুরির টাকা তাদের স্বামীরা সংগ্রহ করেন। তারাই ইচ্ছে মত ব্যয় করেন এ টাকা। নিজেদের টাকা সাধারণত নারীরা ব্যয় করতে পারেন না। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে চা শ্রমিক পরিবারে নারীদের মত উপেক্ষিত থাকে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি বলেন, চা বাগানের নারী শ্রমিকদের পূর্ববর্তী তিন মাসের কাজের ওপর ভিত্তি করে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হয়। ফলে কিছু বেশি ভাতা পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় বাগানের নারীরা বাড়তি পরিশ্রম করেন। এতে মা ও সন্তান দুজনেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।