আইএস যোদ্ধাদের সহধর্মিনী হওয়ার আশায় চার বছর আগে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেছিলেন পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন টেকনোলজি স্কুলের তিন ছাত্রী। তাঁরা হলেন পনেরো বছর বয়স্ক বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত শামীমা বেগম ও খাদিজা সুলতানা ও ননবাঙালি আমিরা আবাসী (১৬)।
গেটওয়েক এয়ারপোর্ট থেকে তুরস্কের বোর্ডার হয়ে তারা পাড়ি দিয়েছিলেন সিরিয়ায়। সর্বশেষ ইস্তাম্বুলের একটি বাস স্টপে তাদের তিনজনকে দেখা যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছিলো। এরপর কিছুদিন তাদের নিয়ে চলে তুমুল আলোচনা ও হৈচৈ। বিবিসি তাঁদের নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রচার করে। কিন্তু এরপর মানুষ ভুলতে বসে এই তিনি স্কুল ছাত্রীকে। কেমন আছে তারা, আদৌ কি তারা বেঁচে আছে। তাঁদের বর্তমান জীবনযাপন নিয়ে বৃটেনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দ্যা টাইম বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তিন ছাত্রীর মধ্যে বৃটিশ-বাঙালি শামীমা বেগমের সাথে কথা বলেছে দ্যা টাইমস। শামীমা জানিয়েছে তাদের নিজেদের সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
টাইমসের কাছে শামীমা জানিয়েছে, সে লন্ডন ফিরে আসতে চায়। এই ফিরে আসার কারণ হচ্ছে তাঁর সন্তান। কারণ খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে ইতোমধ্যে তার দুই সন্তান মারা গেছে। এখন বেঁচে আছে একটি মাত্র সন্তান। চিকিৎসা ও খাবারের অভাবে এই সন্তানটিও মারা যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই তিনি সন্তানের স্বার্থে লন্ডন ফিরতে চান। তিনি সিরিয়া পাড়ি দেয়া ও পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেছেন। শামীমা জানান, সিরিয়া পৌঁছে তাঁদের আশ্রয় হয় রাকা শহরের একটি বাড়িতে। সেখানে তাঁদেরকে একটি ঘরে রাখা হয়, যেখানে নতুন কোনো মেয়ে গেলে পাত্র খুঁজে দেয়ার আগ পর্যন্ত রাখা হয়। শামীমা আইএস সর্দারকে তার চাহিদার কথা জানান।
তিনি বলেন, ইংলিশ ভাষায় কথা বলতে জানে এমন একজনকে তিনি বিয়ে করতে চান, যার বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এর ১০দিন পর হল্যান্ডের নাগরিক ২৭ বছরের একজন কনভার্ট মুসলিম যুবককে বিয়ের জন্য দেখানো হয়। তিনি তাঁকে বিবাহ করতে রাজি হলে শরীয়তমতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের চার বছর পর কিছুদিন আগে তারা স্বামী-স্ত্রী রাকা থেকে পালিয়ে বাগুজ এলাকায় চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তারা দুজন। স্বামীকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় সেনা ক্যাম্পে। আর শামীমার স্থান হয় নর্দার্ণ সিরিয়ার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে আরো ৩৯ হাজার বন্দীর সাথে।
বিয়ের পর তাদের ঘরে তিনটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। প্রথম সন্তান ছিলো মেয়ে। কিন্তু নানা অপুষ্টিজনতি রোগে আক্রান্ত হয়ে গত মাসে (জানুয়ারি ২০১৯) মাত্র ১ বছর ৯ মাস বয়সে মারা যায় মেয়েটি। দ্বিতীয় সন্তানটিও মারা যায় গত বছরের ডিসেম্বরে মাত্র ৮ মাস বয়সে। এখন একটিমাত্র সন্তান বেঁচে আছে। হাসপাতালে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। পর্যাপ্ত খাবার নেই। ভূগছে নানা রোগে। এমতাবস্থায় লন্ডন না ফিরলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা। তাই তিনি সন্তানকে নিয়ে লন্ডন ফিরে আসতে চান।
টাইমস পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, সিরিয়ায় প্রতিনিয়ত বোমা হচ্ছে। অত্যন্ত কঠিন জীবন সেখানে। তবে তার কাছে এটা স্বাভাবিকই মনে হয়। লন্ডন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তার কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি ভেবেছিলেন আইএস খিলাফা প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন এটা সম্ভব নয়। আইএস এর শক্তি ফুরিয়ে আসছে। তিনি বলেন, তিনি সেখানে পৌঁছে বুঝতে পারেন তাদের পক্ষে খেলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবেনা কারণ তাদের মধ্যেও অপ্রেশন ও দুর্নীতি রয়েছে।
অপর দুই সঙ্গী সম্পর্কে তিনি খুব বেশি তথ্য দিতে পারেননি। তবে তিনি জানতে পেরেছেন খাদিজা সুলতানা রাশিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় মারা গেছেন। আর আমিরা আবাসী নিখোঁজ রয়েছেন।