সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের বাড়ি সিলেট নগরীর ধোপাদিঘির পারে। হাফিজ কমপ্লেক্স নামের এই বাড়িটি এখন বেশ আলোচনায়।
বিশেষ করে গত জাতীয় নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ওই বাড়িতে গিয়ে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ ও পরবর্তীকালে দলবদলের কারণে এই আলোচনা। এর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ৩ চৌধুরীর নাম।
নির্বাচনের আগে হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়ে মুহিত ও মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী। সাক্ষাতের পর সিলেট-১ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন চেয়ে মাঠে থাকা ইনাম চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ইনামের দলবদলের আলোচনা শেষ না হতেই এবং জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পর সিলেট বিভাগজুড়ে যখন বিএনপি নেতাদের আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়েছে তখন ফের আলোচনার জন্ম দিয়েছেন আরও দুই চৌধুরী।
তারা হলেন- সিলেট-৩ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমদ চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এর মধ্যে রাতে বাসায় গিয়ে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে ফুল দিয়েছেন শফি আহমদ চৌধুরী। ফলে তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। যদিও শফি চৌধুরী গণমাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলাকালেই শুক্রবার সিলেট আসেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর মুহিত সিলেটে পৌঁছলে তাকে এগিয়ে আনতে বিমানবন্দরে দলের কোনো লোকজনই যাননি। অথচ বিএনপি নেতা ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর থেকে ইনাম, শফি, আরিফ এই তিন চৌধুরীকে নিয়ে ফের আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়েছে সিলেটে। বিএনপিতে ছড়িয়ে পড়েছে দলবদলের আশঙ্কা- বাকি দুই চৌধুরীও কখন জানি ইনামের পথ ধরেন। তবে এমন আশঙ্কা নাকচ করেছেন দুই চৌধুরী।
এদিকে মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাবস্থায় মুহিতের চারপাশ ঘিরে রাখা সিলেটের সুবিধাভোগীরা দায়িত্ব ছাড়ার পরপরই তার থেকে দূরে সরে গেছেন। বিষয়টি নিয়েও জেলায় সমালোচনা চলছে। মুহিতের পাশ থেকে সরে সেসব নেতা এবার ভিড়েছেন মুহিতের ছোট ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের কাছে। তবে মুহিতকে বিমানবন্দর থেকে এগিয়ে না আনার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর রাতে হাফিজ কমপ্লেক্সে হুমড়ি খেয়ে পড়েন সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতারা।
অপরদিকে সিলেটের ছাত্রলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম সৌমিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ক্ষোভ ঝেড়েছেন এভাবে, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে যার অবদান অতুলনীয় আমরা সেসব কথাগুলো ভুলে শুধু মনে রেখেছি রাবিশ, বাস্টার্ড ইত্যাদি। মনে রাখবেন যারা ভালো লোক তারা যা বলে সরাসরি বলে।
আজ আমরা বিবেকহীনের মতো ভুলে গেলাম জাতির সূর্য সন্তানকে, যিনি বয়সের কথা না ভেবে দিনরাত সিলেটবাসীসহ সমগ্র বাংলাদেশের কথা ভেবেছেন। ধিক্কার জানাই সেসব কোকিলকে যারা এক সময় তার পায়ের ধারে বসে থাকতেন নিজস্ব ফায়দা হাসিল করার জন্য। আমাদের ক্ষমা করে দেবেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী জননেতা আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেব। আমরা আপনাকে যথেষ্ট সম্মান দিতে পারিনি।’
সুজন রায় নামের আরেকজন কমেন্টে লিখেছেন, ‘সুবিধাভোগী চাটুকাররা এবার তার ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পেছনে ঘুরবে, সংবর্ধনা দেবে। আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আরেক নতুন নেতা খুঁজে নেবে।’