রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার মার্কিন নাগরিক সুনামগঞ্জের মনিরের মামলায় ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
খবর: অনলাইন বিবিসি

খবর: অনলাইন বিবিসি



বিজ্ঞাপন

সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিক মোহাম্মদ জুবাইর মনিরের মামলার বিষয়ে ঘনিষ্ঠ নজরদারি করছে যুক্তরাষ্ট্র। নিউ ইয়র্কের সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্রান্ডকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। এতে বলা হয়েছে, আমরা ২০১৯ সালের ১০ই জানুয়ারি সাক্ষাৎ করেছি মিস্টার মনিরের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, তিনি সুস্থ আছেন। আমরা জানতে পেরেছি, জুবাইর মনিরের মামলাটি আইসিটিতে উঠবে ২০শে জানুয়ারি। এ বিষয়ে পরিবর্তিত অবস্থার দিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে দূতাবাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। গত ১৯শে ডিসেম্বর জুবাইর মনিরকে সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসার চার দিন পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তার পরিবারের দাবি, যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এর স্বপক্ষে তাদের কাছে প্রমাণ আছে। তাদের আরো অভিযোগ, তাকে গ্রেপ্তারের পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছে না তাকে। জুবাইর মনিরকে গ্রেপ্তারের ২২ দিনেরও বেশি পরে গত ১০ই জানুয়ারি তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কনসুলার সুবিধা দেয়া হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্রান্ডের কাছে সহায়তার জন্য যাওয়ার পরই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার অফিসের মাধ্যমেই পরিবারটি জুবাইর মনির বিষয়ে কিছু তথ্য পাচ্ছে।

ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির সাংবাদিক ব্রজেশ উপাধ্যায় এসব নিয়ে একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জুবাইর মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই সময় তিনি নিজের দেশ সফরে ছিলেন। তার পরিবার বলছে, ১৯৭১ সালের ওই যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর।

১৮ই জানুয়ারি ‘ইউএস সিটিজেন অ্যারেস্টেড ফর ওয়ার ক্রাইমস ইন বাংলাদেশ ওয়াজ অনলি ১৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ব্রজেশ আরো লিখেছেন, মোহাম্মদ জুবাইর মনির নিউ ইয়র্কভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশে অবতরণের চার সপ্তাহ পরে ১৯শে ডিসেম্বর তার গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার পরিবার বলছে, তাকে পরিবারের সঙ্গে একটি ফোনও করতে দেয়া হচ্ছে না।
জুবাইর মনিরের বিচার হবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিটিতে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধাপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে বিচার করার জন্য এ আদালত গঠন করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ব্রজেশ আরো লিখেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তান ভেঙে জন্ম হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের। ওই যুদ্ধে ‘হান্ড্রেডস অব থাইজেন্ডস’ মানুষ নিহত হয়েছেন। কমপক্ষে এক কোটি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার বলে, যুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিল স্থানীয় দোসররা। তাদের অনেককে এরই মধ্যে আইসিটি আদালত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তবে অনেক মানবাধিকার কর্মী ও আইনি বিশেষজ্ঞ এই বিচারকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রজেশ আরো লিখেছেন, নিন্দুকেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অভিযুক্ত করে, সরকার এই বিচারকে বিরোধীদের শাস্তি দিতে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যাদের বিরুদ্ধে এই বিচার করা হচ্ছে বা হয়েছে তার বেশির ভাগই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির।
তবে সরকারি প্রসিকিউটর জায়েদ আল মালুম বিবিসির কাছে জুবাইর মনিরের মামলার বিষয়ে বলেছেন, তিনি অনেক বছর ধরে তদন্তের অধীনে ছিলেন।

জুবাইর মনির ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। দেশে তার রয়েছে রাইস মিল ও ফিশারি ব্যবসা। তা দেখাশোনা করতে প্রায় বছরই তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। তার পরিবারের আশঙ্কা, এবার ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সরকার যে দমনপীড়ন শুরু করেছিল তার অংশ হিসেবেই জুবাইর মনিরকে টার্গেট করা হয়েছে। তার মেয়ে শ্রাবণ মনির বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তার পিতার কিছু করার নেই। তাকে গ্রামে পুরনো একজন বন্ধুর সঙ্গে চা পান করতে দেখা গিয়েছিল। তার পিতার ওই পুরনো বন্ধু এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ জন্যই হয়তো সরকারের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রাবণ মনির বলেন, তার দাদা আবদুল মনির যুদ্ধের সময় পরাজিত পক্ষ অর্থাৎ পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন। এ জন্যও তাদের পরিবারকে টার্গেট করা হয়ে থাকতে পারে।

তবে ঢাকা থেকে টেলিফোনে বিবিসিকে জায়েদ আল মালুম বলেন, বেশ কয়েক বছরের তদন্তের পরে মোহাম্মদ জুবাইর মনিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে আইসিটি। তার বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের কাছে দিরাইয়ে হিন্দু এলাকায় অপহরণ, জিম্মি করে রাখা, হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। জায়েদ আল মালুম আরো বলেন, জুবাইর মনির রাজাকার বাহিনীর একটি অংশ ছিল।
তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। জায়েদ আল মালুম বলেন, তিনি (মনির) রাজনৈতিক বড় কোনো নেতা নন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা অপরাধ করেছিল তাদের বিচারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। যদি মনির অভিযুক্ত হন তাহলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যু পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

ব্রজেশ আরো লিখেছেন, মোহাম্মদ জুবাইর মনির ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেভানে বেশ কিছু ছোটখাটো কাজ করেন। এরপর একজন ক্যাব চালক হন তিনি। ২০০১ সালে শুরু করেন একটি ছোটখাটো ব্যবসা। নিউ ইয়র্কে ধুপ কাঠি ও সুগন্ধি বিক্রি করতে থাকেন। পরে দুটি ছোট ফার্ম কেনেন।এর একটি নিউ ইয়র্কের হ্যামিলটনে। অন্যটি ফ্লোরিডায়।

তার অন্য মেয়ে মনিরা মনির বলেছেন, স্থানীয় বাজারে, বিশেষত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কাছে বিক্রি করতে ওই ফার্মে আমরা শাকসবজি ও ফলমূল চাল করতে শুরু করি। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় তার পিতার বয়স যে ১৩ বছর ছিল এ বিষয়ে তাদের কাছে যাচাই করা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তার দাবি, তার পিতাকে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমার পিতার জন্ম ১৯৫৮ সালের ৩রা জানুয়ারি। যুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশে ছিলেন না। তিনি তখন পাকিস্তানে ছিলেন’।

তবে জুবাইর মনির যে পাকিস্তানে ছিলেন ওই সময়ে এর স্বপক্ষে পরিবারটির কাছে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে তাদের কাছে আছে তার জন্ম সনদ, ন্যাচারালাইজেশন সার্টিফিকেট, যুক্তরাষ্ট্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসব দিয়ে তার বয়স প্রমাণ করা যায়।

জুবাইর মনিরের মেয়ে বলেন, জীবনে অনেক পরে ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হন তার পিতা। সেটা ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি নিউ ইয়র্কে এক গাড়ি দুর্ঘটনার পরে। তবে তিনি যে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সমর্থনকারী ইসলামপন্থি গ্রুপগুলোর পক্ষ নিয়েছিলেন এ কথা সত্য নয় বলে দাবি তার। তিনি বলেন, আমি শুধু বাংলাদেশ সরকারকে বলতে চাই, বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা ধর্মীয় গ্রুপের সঙ্গে আমার পিতার কোনো যোগসূত্র নেই।

ওদিকে প্রসিকিউটর মালুম বলেছেন, যদি ওই পরিবারটির কাছে প্রমাণ থাকে তাহলে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ পরিবর্তে তারা তা আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন।