সিলেটের আতিয়া মহলে মারা যাওয়া মহিলা জঙ্গি মর্জিনার পরিচয় সন্ধানে নেমেছে পিবিআই। এরই মধ্যে তারা মর্জিনার ভাই, ভাবিসহ তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তথ্য। পিবিআই সূত্র জানিয়েছে- মর্জিনার পুরো পরিবারেই রয়েছে জঙ্গি সম্পৃক্ততা। পরিবারের মধ্যে দুই বোন ও এক স্বামী ইতিমধ্যে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ভাই জসিম ও ভাবি আর্জিনা। তবে ভাই ও ভাবির কাছ থেকে এখনো সম্পূর্ণ তথ্য মেলেনি। জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানায় পিবিআই।
সিলেটের আতিয়া মহলের আলোচিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের দুটি মামলাই এখন সিলেটের পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের কাছে তদন্তাধীন। পিবিআইনের ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন আতিয়া মহলের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলারই তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে তিনি পুরো ঘটনার পেছনে অনুসন্ধানে রয়েছেন। তবে এখনো তিনি মর্জিনা ছাড়া আতিয়া মহলে মারা যাওয়া তিন পুরুষ জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেননি। আর মর্জিনাকে নিয়েও এতদিন ধোঁয়াশা ছিল। তার ভাই ও ভাবির কাছ থেকে মর্জিনা সম্পর্কে কিছু তথ্য মিলেছে।
সিলেট পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানিয়েছেন, মর্জিনা সম্পর্কে তথ্য উদঘাটনে মূলত তার ভাই, ভাবি ও অপর একজনকে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাদের বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের তত্ত্বাবধানে আনা হয়। শুক্রবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি তথ্য মেলেনি। জিজ্ঞাসাবাদ এগুচ্ছে বলে তিনি জানান। মর্জিনা বিবাহিত ছিল। তার স্বামীও ছিল। তবে, পিবিআই সূত্র জানিয়েছে- সিলেটের আতিয়া মহলে মারা যাওয়া মর্জিনার পুরো পরিবারই জঙ্গিবাদে জড়িত। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মর্জিনার পরিবারে ছিল দুই বোন ও এক ভাই। মর্জিনার স্বামী ও তার আরেক বোন সীতাকুণ্ডে একটি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে। সিলেটে নিহত হয়েছে মর্জিনা। তবে সীতাকুণ্ডে মারা যাওয়া বোনের স্বামী কোথায় সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার হয়েছে মর্জিনার ভাই জহুরুল হক জসিম ও তার স্ত্রী আর্জিনা বেগম। সঙ্গে হাসান নামে আরো এক জঙ্গিও। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ২০১৭ সালের ১৫ই মার্চ সংঘটিত একটি জঙ্গি ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। এরপর এতদিন তারা চট্টগ্রাম কারাগারেই ছিল।
সম্প্রতি সিলেটের আতিয়া মহলের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের তিনজনকেই আতিয়া মহলের দায়ের করা দুটি ঘটনায়ই শ্যোন অ্যারেস্ট দেখান। এরপর তাদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেটে আনা হয়। বুধবার তাদের সিলেটের আদালতে হাজির করে পিবিআই রিমান্ড আবেদন করে। ওই আবেদনে শুনানি শেষে জসিম, আর্জিনা ও হাসানের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিলেটের আদালত। বৃহস্পতিবার ওই তিনজনকে নিজ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পিবিআই। তদন্ত কর্মকর্তা জানান- সিলেটের আতিয়া মহিলা জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় নিজেরাই আত্মহত্যা করে মারা গেছে ৪ জন। এই চারজনের মধ্যে একমাত্র মহিলা ছিল মর্জিনা। অপর তিনজন হচ্ছে পুরুষ। আতিয়া মহল থেকে মর্জিনাসহ চার জনের দগ্ধ হওয়া শরীর উদ্ধার করা হয়েছিল। এরপর ডিএন টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহে রাখা হয়। সিলেটের আতিয়া মহলে মর্জিনা ভাড়াটে হওয়ার সময় তার স্বামীর যে নাম ঠিকানা দিয়েছিল সেটির সঙ্গে তার পরিবারের দেয়া তথ্য মিলছে না। মর্জিনার ভাই ও ভাবির তথ্য মতে- মর্জিনার স্বামী সীতাকুণ্ডেই জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মারা গেছে। সিলেটের মারা যাওয়া তিনজনের সঙ্গে মর্জিনার সম্পর্ক কী- সেটি এখনো অজানা। ২০১৭ সালের মার্চ মাসের শেষদিকে আতিয়া মহলে জঙ্গি বিরোধী অভিযান শুরু করা হয়। নগরীর শিববাড়ি এলাকার আলোচিত আতিয়া মহলের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে লুকিয়ে ছিল দেশকাঁপানো জঙ্গিরা। প্রথমে পুলিশের চোখেই ধরা পড়ে এই তৎপরতা। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা টানা তিনদিন অভিযান চালিয়ে আতিয়া মহলকে জঙ্গিমুক্ত করে। এ অভিযানে আত্মাহুতি দিয়ে মারা যায় মর্জিনাসহ ৪ জঙ্গি। আতিয়া মহলের অভিযানের সময় বাইরে গ্রেনেড হামলায় মারা যায় র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান কর্নেল আজাদ, পুলিশের দুই ওসিসহ ৭ জন। ৪ঠা এপ্রিল আতিয়া মহলের ঘটনায় শহরতলির মোগলাবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এ দুটি মামলা এখন পিবিআইর কাছে তদন্তাধীন।