বিশেষ প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর পায়ের তলায় যেন মাটি নেই সিলেটের জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই প্রার্থীর। নির্বাচনের পর থেকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না তাদের।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে সিলেট-২ আসনে ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া ও সিলেট-৫ আসন থেকে মো. সেলিম উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবশ্য এবারের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে কোনো কূটকৌশল কাজে আসেনি তাদের। উল্টো জামানত হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম দুই মহাসচিব।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এমন করুণ হারে হতাশ কর্মী-সমর্থকরা। প্রার্থীদের দেখা যাচ্ছে না নিজ নিজ এলাকায়। বিশেষ করে বর্তমান সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ইয়াহিয়া ও সেলিম উদ্দিনের এমন হার মেনে নিতে পারছে না কর্মীসমর্থকরা। ভোটের সংখ্যা দেখে যেন পায়ের তলায় মাটি নেই এই দুই প্রার্থীর। আবার এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়াও দিচ্ছেন না তাঁরা।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা থেকে প্রার্থী ছিলেন ওই দুই সাংসদ। তাঁরা মহাজোট সরকারের হয়ে করেছেন অনেক উন্নয়ন কাজ। তবুও তারা ব্যস্ত ছিলেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের আইনি মারপ্যাঁচে ফেলে পরাস্ত করার ষড়যন্ত্রে। এক্ষেত্রে অবশ্য সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া সফল হন। নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপি প্রার্থী তাহসিনা রুশদী লুনার প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে আটকে দেন তাকে।
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান উল্লেখ করে তাকে আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। হাফিজ মুজমদারের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেছিলেন সেলিম উদ্দিন। তবে আদালত মজুমদারের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করলে সেলিম উদ্দিনের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
মূলত ভোটের মাঠে বাস্তবে জাতীয় পার্টির সেলিম ও ইয়াহিয়ার সব চালাকির উল্টো ঘটেছে। একেবারেই ধরা খেয়ে যান তারা। মহাজোটের প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও সিলেট-২ আসনে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানের কাছে হেরেছেন ইয়াহিয়া আহমদ চৌধুরী এহিয়া। অবস্থানের দিক থেকে হয়েছেন চতুর্থ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোকাব্বির খান উদীয়মান সূর্য প্রতীকে ৬৯ হাজার ৪২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া লাঙ্গল প্রতীকে পান ১৮ হাজার ৩২ ভোট। তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান (ডাব প্রতীকে ৩০ হাজার ৪৪৯ ভোট) এবং এনামুল হক সরদার সিংহ প্রতীকে ২০ হাজার ৭৪৫ ভোট পেয়েছেন।
সিলেট-৫ আসনে সেলিম উদ্দিন অবস্থানের দিক থেকে হয়েছেন তৃতীয়। লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ২৪২ ভোট। আসনটিতে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের হাফিজ আহমদ মজুমদার। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৮৬ হাজার ১৫১ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে সেলিম উদ্দিনের ভোটের ব্যবধান আকাশ-পাতাল।
এছাড়া সিলেটে জাতীয় পার্টির আরও তিনটি আসনে প্রার্থী ছিল। সিলেট-১ আসনে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫০২ ভোট, সিলেট-৩ আসনে উসমান আলী পান ২ হাজার ৯১৬ ভোট এবং সিলেট-৪ আসনে এ টি ইউ তাজ রহমান পেয়েছেন মাত্র ৪২৩ ভোট।