৬ মাসের মাথায় আবারো মুখোমুখি সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। দু’জনই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে আরিফ অবস্থান নিয়েছেন তার নিজ দল বিএনপি’র প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের পক্ষে ও কামরানের অবস্থান আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. একে আবদুল মোমেনের পক্ষে। যেন আবারো সেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দ্বৈরথ। সিলেটে ভোটের মাঠে নৌকা ও ধানের শীষের প্রচারণার ভিড়ে এই দুই নেতার প্রচারণা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দিন যতই যাচ্ছে দুইপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। মান-অভিমান ভুলে তারা নিজ নিজ মার্কা এবং প্রার্থীর পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নামছেন। এতে করে দ্রুত বদলাচ্ছে দৃশ্যপট। হিসাব-নিকাশ হচ্ছে কঠিন থেকে কঠিনতর।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। কিন্তু মনোনয়ন তিনি পাননি। এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোটভাই জাতিসংঘ ফেরত কূটনীতিক ড. একে আবদুল মোমেনকে। প্রার্থী ঘোষণার পূর্ব-মুহূর্ত পর্যন্ত আওয়ামী লীগে মনোনয়ন নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পর তারা আবারো নৌকার পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। আশঙ্কা ছিল সাবেক মেয়র কামরানকে নিয়ে। সিটি নির্বাচনের বিপর্যয়ের পর তিনি কতখানি ভোটের মাঠে সক্রিয় হবেন এ নিয়েও ছিল তুমুল আলোচনা। কিন্তু সব অভিমান ভুলে শুরু থেকেই এবার কামরান ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. একে আবদুল মোমেনের পক্ষে যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটিরও দায়িত্ব পড়েছে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের কাঁধে। কামরানও উদার। শুরু থেকেই তিনি অবস্থান পরিষ্কার করে নৌকার পক্ষে সব অংশের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তিনি সফলও হয়েছেন। কামরান মাঠে নামায় তার অংশের নেতাকর্মীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে কারণে এবার দলের ভেতরেই তিনি রাখছেন তীক্ষ্ণ নজর। সিলেট-১ আসন কামরানের নিজের নির্বাচনী এলাকা হলেও কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় ৬টি আসনেই মহাজোটের নির্বাচন তদারকি করছেন তিনি। যখন যেখানে ডাক পাচ্ছেন নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গতকালও নৌকার পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নগরীর বন্দরবাজার, মহাজন পট্টি, কালিঘাট, মাছিমপুরে গণসংযোগে নামেন। এ সময় কামরান বলেন, নৌকার পক্ষে জনস্রোত তৈরি হয়েছে। বিজয় নিয়েই এই জনতা ঘরে ফিরবে। নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, মানুষের বাসা বাড়িতে গিয়ে শেখ হাসিনার সালাম দিয়ে এই সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক, যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউর, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এডভোকেট রণজিৎ সরকার, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু প্রমুখ।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কিছুটা অভিমানী ছিলেন মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। সেই মান-অভিমান ভুলে তিনি বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের পক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সকালে তার বাসায় নাস্তা সারেন সিলেটের প্রচারণায় আসা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রব, ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান ও সিলেট-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। নাস্তা সেরেই মুক্তাদিরের পক্ষে লিফলেট হাতে নিয়ে বের হন আরিফুল হক চৌধুরী। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে হাজির হন নগরীর বন্দরবাজার পয়েন্টের করিমউল্লাহ মার্কেটের সামনে। সেখান থেকে তিনি নির্বাচণী প্রচারণা শুরু করেন।
আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার মুক্তাদিরের পক্ষে মাঠে সক্রিয় হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাকসহ সিলেটের সিনিয়র নেতারা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। মাঠে নেমেই আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- তারা সিটি করপোরেশনেও জোরপূর্বক কিছুই করতে পারেনি, এবারো পারবে না। মানুষ জেগে উঠেছে। ধানের শীষের পক্ষে সিলেটে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। এর আগে গত বুধবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর ও মোগলাবাজার এলাকায় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে ধানের শীষের প্রচারণা চালান আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে ধানের শীষে ভোট দিতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে- আরিফুল হক চৌধুরী মাঠে নামায় সিলেটের ধানের শীষে পক্ষে প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বেড়ে যাচ্ছে মুক্তাদিরের বহরের পরিধি। আর সিলেটে এবারের নির্বাচনে বিএনপির অনুপ্রেরণা আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয়। ৬ মাস আগে এই মাঠেই ভোটযুদ্ধে শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে জয় ঘরে তুলেছে বিএনপি। সেবার দল আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে চ্যালেঞ্জে নেমেছিলো। আর এবার সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এই প্রার্থী সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নির্বাচনী ঐক্য। বিএনপিসহ ২৩ এবং ঐক্যফ্রন্টের সবার মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে এককাতারে নিয়ে আসতে সবার কাছে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। এতে দিন দিন ভোটের মাঠে নিত্য-নতুন চমক নিয়ে আসছেন মুক্তাদির।