একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেনে সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেন পেশায় শিক্ষক। আর বিএনপির মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ব্যবসায়ী। বিএনপির অপর প্রার্থী ইনাম আহমেদ চৌধুরী একজন সাবেক আমলা। মনোনয়নপত্রে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেয়া হলফনামায় তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। আর তিনজনই উচ্চ শিক্ষিত। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্রই যাচাই বাছাই করে বৈধ ঘোষণা করেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেয়া হলফনামার তথ্যমতে খন্দকার আব্দুল মোমেনের হাতে এক কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা নগদ আছে। তার আয়ের খাতের মধ্যে রয়েছে- বাড়ি, দোকান বা অন্যান্য খাত থেকে ভাড়া বাবদ ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৪ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩৮ হাজার ৮৩৩ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ টাকা, পেশা থেকে ২৭ লাখ ৪১ হাজার ২২৪ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে তিনি ৩০ হাজার টাকা আয় করেন।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে মোমেনের হাতে নগদ এক কোটি ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, ১৯৪৬ ইউএস ডলার, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ১০ লাখ টাকার শেয়ার, পোস্টাল, সেভিংস, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে ১০ লাখ টাকার বিনিয়োগ, বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি আছে ২০ লাখ টাকার, নিজের নামে ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে ৫ লাখ টাকার।
তার স্ত্রীর স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি আছে ৫ লাখ টাকার, স্ত্রীর নামে আসবাবপত্র আছে ৩ লাখ টাকার। পারিবারিক ব্যবসার পুঁজি ও রেমিট্যান্স খাতে মোমেনের অস্থাবর সম্পদ আছে ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৪২৩ টাকার।
মোমেনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে সাড়ে ২২ লাখ টাকার অকৃষি জমি, দালান (আবাসিক বা বাণিজ্যিক) ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮৫ টাকার এবং বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট আছে ৩ কোটি ৮২ লাখ ৬ হাজার টাকার। তার নামে কোনো ঋণ নেই। তিনি ঋণখেলাপি নন এবং কোনো দেনাও নেই তার। তার নামে আগে কখনো ফৌজদারি মামলা হয়নি, বর্তমানেও নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া তার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে গৃহীত হয়েছে। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির পেশায় ব্যবসায়ী। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর। তার বিরুদ্ধে ৫টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় ২টি, জালালাবাদ, শাহপরান ও এয়ারপোর্ট থানায় একটি করে মামলা আছে। সবগুলো মামলাই আদালতে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা ছিল।
উভয় মামলার চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। হলফনামার তথ্যমতে- খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের ব্যবসায়ীক ঋণ রয়েছে। তার নামে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৭ টাকা, এক্সিম ব্যাংকে ৮৭ লাখ ৩১৪১ টাকা এবং সিটি ব্যাংকে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৭ টাকার একক ঋণ রয়েছে। খন্দকার মুক্তাদির ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লি.- এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে একজন তিনি।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির তিনটি আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি সুতা রং করার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কেমিক্যাল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ তার স্ত্রীর আয় ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৬ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের কাছে নগদ ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫১০ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে নগদ ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯০ টাকা রয়েছে। সিটি ব্যাংকে তার নামে ৩৬ হাজার ৩১০.৭৩ টাকা, ব্যাংক এশিয়ায় ৬ লাখ ৬৪ হাজার ১২৩.৪৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে এবি ব্যাংকে ৫০ হাজার ১৩১ টাকা জমা আছে।
বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার হিসেবে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নিজের নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা, তিন কোটি ২ লাখ টাকা এবং ১১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ টাকার শেয়ার আছে। তার স্ত্রীর নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে তিন কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ৮৩০ টাকা, তিন কোটি ২ লাখ টাকা এবং এক লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার শেয়ার আছে। মুক্তাদিরের নিজের নামে দুটি জিপ আছে, যেগুলোর মূল্য ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা। নিজের নামে বিয়ের সময় ‘দান হিসেবে প্রাপ্ত’ স্বর্ণ আছে ৫০ ভরি (মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা), স্ত্রীর নামে বিয়ের সময় ‘দান হিসেবে প্রাপ্ত’ ৫০ ভরি স্বর্ণ (মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা) আছে। তার নামে ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাব এবং স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। মুক্তাদিরের স্ত্রীর নামে ঢাকার গুলশানে প্রতিটি ৩২৭২.২৮ বর্গফুট করে দুটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট আছে। এই দুই অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটির মূল্য ‘অর্জনকালীন সময়ে’ ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
বিএনপির অপর প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী হলফনামায় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন এলএলবি। আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট এবং দোকান। তিনি সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করে বর্তমানে সমাজকল্যাণমূলক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান থেকে তিনি বছরে ৫ লাখ ৪১ হাজার ৫৬০ টাকা আয় করেন। তার নামে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত আছে ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯২০ টাকার। ইনাম চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ ১১ লাখ টাকা এবং ১৪ হাজার ৯২০ ইউএস ডলার রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৭ টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ইনাম চৌধুরীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট আছে ৩৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার।
প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো গত ২৮ নভেম্বর বুধবার। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ছিলো গত ২ ডিসেম্বর রোববার। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।