সিলেট বিভাগে এইচআইভি সংক্রমণে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছেই। গত এক বছরে নতুন করে বিভাগের চার জেলায় ৬৬ জন সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ বছরে মারা গেছে ১৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশ ফেরত। রয়েছে শিশু এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও।
সিলেট বিভাগে এইচআইভি সংক্রমণে আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন আশার আলো এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমআরটি সেন্টার থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরে সারা দেশে নতুন করে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬৯ জন, যাদের মধ্যে সিলেট অঞ্চলে রয়েছেন ৬৬ জন। এদের অধিকাংশই প্রবাস ফেরত শ্রমিক বলে জানিয়েছেন তারা।
তাদের তথ্যানুযায়ী, ১৯৯৮ সালে সিলেটে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে সিলেটে এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা ছিল ২৮ জন। আর চলতি বছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০২-এ। ইতোমধ্যে মারা গেছেন ৩৬৬ জন, জীবিত আছেন ৫৩৬ জন। জীবিতদের মধ্যে পুরুষ ২৬৭, নারী ২২৪, শিশু ৪৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২ জন রয়েছেন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইচআইভি সেবা জোরদারকরণ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপক মো. মোতাহের হোসেন জানান, বর্তমানে তাদের সেন্টার থেকে এইচআইভির ওষুধ ও অন্যান্য স্বাস্থসেবা নিচ্ছেন ৪৭৮ জন। এখানে এইচআইভি আক্রান্তদের ওষুধসহ সবধরণের স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালে ওসমানী হাসপাতালে প্রথমবারের মতো গর্ভবতী মহিলাদের বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান শুরু হয়। এরপর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৪২ জন মা পূর্ণ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আরো বেশ কয়েকজন মা সন্তান জন্মদানের অপেক্ষায় রয়েছেন।
আশার আলো সোসাইটির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. আব্দুর রহমান জানান, প্রবাসে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের এইচআইভি ভাইরাস ও এইডস সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। যে কারণে তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। আর দেশে এসে চক্ষুলজ্জার কারণে তারা বিষয়টি গোপন রাখেন। ফলে তা তাদের স্ত্রীদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে। এ জন্য বিমানবন্দরে এইচআইভি পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এ কে মাহবুবুল হক বলেন, সঠিক সময়ে এইচআইভি শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সম্ভব। ওসমানী হাসপাতাল থেকে আক্রান্তরা বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। এখানে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়। কাজেই যে কেউ নির্দ্বিধায় হাসপাতালের সেবা নিতে আসতে পারেন।